শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ময়লা-আবর্জনায় ভরা টংকাবতী খাল

প্রকাশিতঃ ৫ মে ২০২৪ | ৩:১১ অপরাহ্ন


মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার টংকাবতী খালের রাজঘাটা ব্রীজ এলাকায় গত দেড় বছর ধরে বটতলী শহরের প্লাস্টিক ও পলিথিনসহ যাবতীয় ক্ষতিকারক বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।

এতে দুর্গন্ধে জনবসতিপূর্ণ ওই এলাকার পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বর্জ্যগুলো খালে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে দ্রুতই ভরাট হয়ে যাচ্ছে খালটি। মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে খালের পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিপন্ন হয়ে পড়েছে মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণীর জীবন। অভিযোগ, শহরের বর্জ্য ফেলার মাধ্যমে টংকাবতী খালের মৃত্যু নিশ্চিত করা হচ্ছে।

জানা যায়, উপজেলার প্রধান দুটি খালের মধ্যে একটির নাম টংকাবতী। পার্বত্য বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকা থেকে উৎপত্তি লাভ করে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ও পদুুুুয়া ইউনিয়নের পাশ ধরে আমিরাবাদ ইউনিয়নের মাঝখানে প্রবাহিত হয়ে সাতকানিয়া উপজেলার গারাঙ্গিয়া গ্রামে ডলু খালে মিশেছে খালটি।

স্থানীয়রা বলছেন, কয়েক বছর আগেও খালের পানি দিয়ে তারা গোসল ও গৃহস্থালির কাজ করতেন। কিন্তু ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্যে ভরাট হয়ে এখন খালে আর আগের মতো জোয়ার আসে না। বর্তমানে এটি মরা খালে পরিণত হয়েছে।

আমিরাবাদ গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ নূর আহমদ স্মৃতিচারণ করে একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘একসময় টংকাবতী খালে জাল ফেললেই প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত হরেক রকম দেশীয় প্রজাতির মাছ। হাত দিয়েও এসব মাছ ধরা যেত অনায়াসে। দেখা মিলতো শামুক, কুইচা ও কচ্ছপসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর। ১০ বছরের ব্যবধানে টংকাবতী খাল থেকে দুই-তৃতীয়াংশ মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটেছে।’

রাজঘাটার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা শৈশবে খালের তীরবর্তী বিস্তীর্ণ বালুচরে ফুটবল খেলতাম। খালে স্বচ্ছ পানিতে গোসল করতাম। এখন বিস্তীর্ণ বালুচরও নেই, ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্যে গোসল করার মতো স্বচ্ছ পানিও নেই।’

স্থানীয় বাসিন্দা সাংবাদিক এহেতেশামুল হক রাব্বি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘টংকাবতী খালের সোনালি বালু পাকা ভবনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বছরের পর বছর এসব বালু নির্বিচারে অবৈধভাবে উত্তোলন করেছে অসাধু ব্যক্তিরা। এতে টংকাবতী তার সৌন্দর্য হারিয়েছে। এছাড়া গত দেড় বছর ধরে লোহাগাড়া উপজেলার প্রধান প্রাণকেন্দ্র বটতলী শহরের বিপুল পরিমাণ ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্য টংকাবতী খালে প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে। এতে দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বর্জ্যগুলো খালে ছড়িয়ে পড়ছে।

লোহাগাড়া শহর পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সালাহ উদ্দিন হিরু একুশে পত্রিকাকে বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি উপলব্ধি করেছি। আমাদের সুনির্দিষ্ট ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় সমস্যাটি হচ্ছে। এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আমাদের কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করি, সেখানে একটি সিদ্ধান্ত হবে।

জানতে চাইলে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইনামুল হাছান একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘বটতলী শহর পরিচালনা কমিটির দায়িত্বরত সবাইকে ডাকা হয়েছে। তাদের সাথে আলাপ করব। টংকাবতী খালের দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেব।’