‘হ্যালো সুব্রত বাইন বলছি’

প্রত্যয় মজুমদার : স্ক্রিনে ভেসে আসে একটি গ্রামীণ নাম্বার। রিসিভ করতেই রাশভারী কণ্ঠ। হ্যালো সালামালেকুম, সুব্রত বাইন বলছি।

: ওয়ালাইকুমুস সালাম। কোন সুব্রত বাইন?
: আমাকে চিনতে পারছেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রালয় যাকে ধরার জন্য একসময় পুরস্কার ঘোষণা করেছিল আমি সেই সুব্রত বাইন।

ভদ্রমহিলা এবার একটু নড়েচড়ে বসেন। তার কাছে সুব্রত বাইনের কী প্রয়োজন!

: ভাই আমার সাথে আপনার কী সম্পর্ক, আমাকেই বা কেন ফোন করলেন?

: আমার গ্রুপের দুইজন ছেলে গুলি খেয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তাদের বাঁচানোর জন্য অনেক টাকার দরকার। আপনি আমাদের কিছু টাকা দেবেন।

: আপনি কার কাছে ফোন করেছেন!
: আপনার কাছেই
: আমি কে?
: আপনি সুলতানা আপা…আপনি কোথায় থাকেন কী করেন সব আমাদের জানা।
: কী আশ্চর্য, আপনারা আমাকে কেন ফোন করেছেন।নিজে চলতে পারি না। আমিই বা কোত্থেকে টাকা দেব।

এরপর ওই প্রান্তে ফোনটা হাতবদল করে আরেকজনকে দিয়ে বলা হয়, নেয় ধর এই মহিলারে একটু হেদায়েত কর।

: আপা এত প্যাঁচাল করছেন কেন? সুব্রত বাইন বলছেন টাকা দিয়ে দিবেন ব্যস।
: আপনি কে?
: আমি বিপ্লব, সুব্রত বাইনের সাথে থাকি। আর কিছু দরকার আছে?
: ভাই আমি কোনো টাকা দিতে পারব না।
: এতক্ষণ ভদ্র ভাষায় বলেছি, এরপর কিন্তু অন্যভাষা ব্যবহার করা হবে।

বলেই রুদ্রমূর্তি ধারণ করা হয় ওই প্রান্তে। এসময় ফোনের লাইন কেটে যায়। ফোনটা আরেকবার ঢোকার আগেই ভদ্রমহিলা নাম্বারটা ব্লক করে দিয়ে যেন হাফছাড়েন।

যার সাথে এই কথোপকথন তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকের ম্যানেজার। বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া একটার দিকে চকবাজার নিজ অফিসে কাজ করার সময় তার কাছে অনাহুত এই ফোনটা আসে।

তিনি একুশে পত্রিকাকে জানান, এর আগেও এরকম একটি অবাঞ্ছিত ফোন থেকে টাকা দাবি করে নানা কথা বলেছিল। আমি বুঝতে পারছি না কারা এই কাজগুলো করছে। প্রশাসনও বা কেন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এরা কোনো সন্ত্রাসী নয়। মূলত প্রতারক। ফোন করে সমাজের অবস্থানসম্পন্ন মানুষদের কাছ থেকে এরা চাঁদা চায়।

বিভিন্ন ফেয়ারে প্রদর্শিত, ব্রুসিয়ার, ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করে সেখান থেকে ফোন নম্বর ও ঠিকানা ধরে সংশ্লিষ্টজনের বিস্তারিত তথ্য জেনে নেয়। এরপর ভয় দেখানোর জন্য শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, কখনো ডাকাত শহীদ, সন্ত্রাসী শাহাদাত, জিসান কিংবা মেজর জিয়ার নাম ব্যবহার করে তারা। তাদের দলে আবু মিয়া নামে একজন লোক আছে, যার কণ্ঠ সুব্রত বাইনের সাথে হুবহু মিল।

কিছুদিন আগে এরকম একটি চক্রের সন্ধান পায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম গত আগস্ট মাসের শুরুর দিকে তার ফেসবুকে এই সংক্রান্ত একটা স্ট্যাটাস দেন। সেখানে এই জাতীয় ঘটনায় না ঘাবড়ানো কিংবা কোনো ধরনের লেনদেন না করার জন্য সবার প্রতি তিনি অনুরোধ জানান।