:: একুশে প্রতিবেদক ::
চট্টগ্রাম: পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যাকান্ডে কারা জড়িত- এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নেমে কোন কূলকিনারা পাচ্ছে না পুলিশ! তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রধান তিনটি কারণে এ হত্যাকান্ডে ‘জঙ্গিগোষ্ঠি’ জড়িত থাকতে পারে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানান, মাহমুদা খানম মিতু কেন আধঘণ্টা আগে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন- এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে একটি মাত্র কারণ পাওয়া গেছে। সেটি হচ্ছে ‘স্কুল থেকে আসা এসএমএস’। তবে মোবাইলের সিডিআর (কল ডিটেইলস রেকর্ড) দেখে ‘এসএমএস’ এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অথচ ‘এসএমএস’ আসার কথা ঘটনার আগের দিন রাতে তিনি একাধিকজনকে বলেছেন। এই যে তদন্তে ‘এসএমএস’ নিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে- সে কাজটা তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ কেউ করেছে। এই ঘটনায় যে জঙ্গিরা জড়িত থাকতে পারে, সেটা ‘এসএমএস’ কাণ্ডে বোঝা যাচ্ছে! এ পরিস্থিতিতে সিডিআর টেম্পারিং হয়েছে- কিনা সেটার তদন্ত চলছে।
ঘটনার সময় গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল এসপিপত্মী মিতুকে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দুই বছরে উগ্রপন্থিরা যেসব হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, তার সঙ্গে মিতু হত্যার মিল আছে। দুর্বৃত্তরা প্রথমে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে, পরে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গিদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, এমন মানুষদের উপর তারা প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়। তাছাড়া জঙ্গিদেরকে ‘নানা প্রশিক্ষণের মধ্যমে’ উগ্র করে তোলা হয়। কারাগারে বন্দি থাকা সদস্যরা মাঠপর্যায়ে নানা কথা লিখে চিঠির মাধ্যমে অন্যদের আরো উত্তেজিত করে তোলে। এসব চিঠি পেয়ে তারা, ‘টার্গেটকৃতদের’ উপর চরমমাত্রায় ক্ষুব্ধ হয়। তাই ইচ্ছেমতো ছুরিকাঘাত করে কষ্ট দিয়ে মেরে মানসিক শান্তি পাওয়ার চেষ্টা করে জঙ্গি সদস্যরা। ছুরিকাঘাত করে পালানোর সময় গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা। মিতু ভাবীর ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে!
এদিকে চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনকালে বাবুল আক্তারের জঙ্গিবিরোধী অভিযান দেশজুড়ে প্রশংসিত হয়। গ্রেফতার হয় জেএমবির চট্টগ্রামের সামরিক প্রধান জাবেদ। বাবুল আক্তারের একের পর এক অভিযানে চট্টগ্রামে ভেঙে পড়ে জেএমবির সাংগঠনিক কাঠামো। তাই প্রতিশোধ নিতে জেএমবি এই খুনের ঘটনা ঘটাতে পারে।
এ বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, সদরঘাটের ছিনতাইয়ের একটি ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে জেএমবির একটি নেটওয়ার্কের সন্ধান পান বাবুল আক্তার। এরপর ধারাবাহিকভাবে তিনি অগ্রসর হতে থাকেন। তার জঙ্গিবিরোধী অভিযান দমিয়ে রাখার চেষ্টার অংশ হিসেবে এ খুন হতে পারে।
জঙ্গিরা ছাড়া বাবুল আক্তারের বড় শত্রু নেই এই মুহূর্ত্বে- যোগ করেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে গত ২৫ জানুয়ারি বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে ‘স্বর্ণ আবুর’ অফিস থেকে ২৫০ পিস স্বর্ণের বার ও ৬০ লাখ টাকা উদ্ধারের পর এ খুনের ঘটনায় সোনা চোরাচালানীদের হাত থাকতে পারে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
তবে এ বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে স্বর্ণবার উদ্ধার হয়েছিল একটি গোয়েন্দা সংস্থার খবরে। সেখানে বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে ডিবির একটি দল উপস্থিত ছিল মাত্র। মূল কাজটি করে ওই গোয়েন্দা সংস্থাটি।