মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা সরকারের দায়িত্ব

প্রকাশিতঃ ২৮ জুলাই ২০২৪ | ৮:২৫ পূর্বাহ্ন


নজরুল কবির দীপু : সাম্প্রতিক সহিংসতায় দেশের অর্থনীতি আরও সংকটে পড়েছে। বিভিন্ন হিসাবে দেখা যায়, টানা পাঁচ দিনের অস্থিরতায় প্রতিদিন প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক কমে লেনদেন দেড় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পে ৮ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চা, চিংড়িসহ অন্যান্য রপ্তানি খাতেও ক্ষতি হয়েছে। দোকানপাট বন্ধ থাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হিসাবে, সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিদিন প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। এতে সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মালিকরা। পোশাক কারখানা বন্ধ থাকায় রপ্তানি আয়ে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে, যা সার্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতা, ইন্টারনেট বন্ধ এবং সরকারি ছুটির কারণে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। আমদানি-রপ্তানি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ক্ষতি আরও বেড়েছে।

অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতি মোকাবিলায় বিভিন্ন নীতিসহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে বন্দরের ডেমারেজ চার্জ মওকুফ, ঋণের সুদ কমানো, রপ্তানি আয় এবং ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো ইত্যাদি।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে দিন আনে দিন খায় যারা। করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইতোমধ্যেই অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সাম্প্রতিক অস্থিরতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এছাড়া দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

আশার কথা, বৃহস্পতিবার থেকে ইন্টারনেট চালু হওয়ায় আমদানি-রপ্তানি আবার শুরু হয়েছে। তবে ক্ষতি কমাতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। যা হয়ে গেছে তা ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়, তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে সব পক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে। সবার যৌথ প্রচেষ্টায় দেশের অর্থনীতিকে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

সরকারের দায়িত্ব এখন সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা প্রদান করা। এর মধ্যে রয়েছে আর্থিক প্রণোদনা, সুদ মওকুফ, কম সুদে ঋণ দেওয়া ইত্যাদি। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা জরুরি।

এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সরকারের উচিত স্থিতিশীল ও সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা। সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের সহিংসতা এবং অস্থিরতার সৃষ্টি না হয়।

এছাড়াও, দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ, দক্ষ জনশক্তি তৈরি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ইত্যাদি।

সর্বোপরি, সরকার, ব্যবসায়ী, শ্রমিক এবং সাধারণ মানুষ- সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশের অর্থনীতির এই কঠিন সময় কাটিয়ে উঠে আবার গতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

এই পরিস্থিতিতে, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরুদ্ধারে সহায়তা করা, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আনতে বেসরকারি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

এছাড়াও, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকারের উচিত মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুরক্ষা এবং আর্থিক খাতের সুশাসন নিশ্চিত করা।

এই সংকটময় মুহূর্তে, দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব রয়েছে। সামাজিক সংহতি বজায় রাখা, গুজব এড়িয়ে চলা এবং সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্তগুলোর প্রতি আস্থা রাখা জরুরি। আমরা যদি সবাই একযোগে কাজ করি, তাহলে নিশ্চিতভাবেই এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব এবং দেশের অর্থনীতিকে আবার গতিশীল করে তুলতে পারব।

এটি একটি জাতীয় সংকট এবং আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর মোকাবিলা করতে হবে। সরকার, বেসরকারি খাত, নাগরিক সমাজ এবং সাধারণ মানুষ- সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা এবং একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ এবং সুখী বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, একুশে পত্রিকা।