একুশে প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাসূচি বর্তমানে ব্যাপক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এর মূল কারণ হলো সরকারের সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষকদের চলমান কর্মবিরতি এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতা। এই দুই আন্দোলনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের সেশনজটে পড়ার শঙ্কা বাড়ছে।
করোনা মহামারীর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম ইতোমধ্যেই দেড় বছর বন্ধ ছিল, যা সেশনজটের সৃষ্টি করেছিল। এই জট কাটিয়ে ওঠার আগেই কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
গত ৭ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি এবং পরবর্তীতে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৬ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায় এবং ভর্তি পরীক্ষা ও সমাবর্তন অনুষ্ঠানও অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা সংক্রান্ত জরুরি বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, চবির পালি বিভাগের ৩য় বর্ষের পরীক্ষা ২৭ জুন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ১ম বর্ষ ও ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের এমবিএ ২য় সেমিস্টার ফাইন্যাল পরীক্ষা গত ৭ জুলাই, পদার্থবিদ্যা বিভাগের ১ম বর্ষের পরীক্ষা ৮ জুলাই, ইতিহাস বিভাগের ১ম বর্ষের পরীক্ষা গত ১৬ জুলাই এবং ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের ১ম বর্ষের পরীক্ষা ১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এর ১ম বর্ষের পরীক্ষা ১ জুলাই, বাংলা বিভাগের ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের পরীক্ষা ১১ জুলাই, ওশানোগ্রাফি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের মৌখিক পরীক্ষা তারিখ ১৫ জুলাই এবং রসায়ন বিভাগের ১ম বর্ষের পরীক্ষা আগামী ৫ আগস্ট তারিখে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
এছাড়াও, প্রায় সবগুলো বিভাগে ধীরে ধীরে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার কারণে সেই পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বারবার ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার দাবি জানালেও, সহিংসতার আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এই পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে শিক্ষার্থীদের সেশনজটের পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।
শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে ক্লাস-পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে তাদের পাঠ্যক্রম শেষ করতে এবং পরীক্ষা দিতে সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে, শিক্ষকরাও মনে করছেন যে ক্যাম্পাস দ্রুত না খুললে শিক্ষাব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা দাবি করছেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দ্রুত ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু তাহের জানিয়েছেন, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরই ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে, সরকার এখনো পর্যন্ত শিক্ষকদের দাবি পূরণে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় শিক্ষকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন কিনা এবং ক্লাস-পরীক্ষা কবে নাগাদ শুরু হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। এই অনিশ্চয়তার ফলে শিক্ষার্থীদের সেশনজটের শঙ্কা আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
জাতীয় অধ্যাপক আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন দেশের শিক্ষাব্যবস্থার এই সংকট নিয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।