একুশে প্রতিবেদক : ঢাকার আশুলিয়া থানার জালালাবাদ মডেল টাউনে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজাহানের ৯০ লাখ টাকা মূল্যের সাততলা আরেকটি বাড়ির সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাড়িটি বিক্রি বা হস্তান্তরের চেষ্টা চলছে বলে জানতে পেরে দুদক ক্রোকের আবেদন করে। গত বুধবার মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুন নেসা বাড়িটি ক্রোকের (জব্দের) আদেশ দেন।
মো. শাহজাহান ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ পুলিশে উপপরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার লালমাই থানার কাতালিয়া এলাকায়। শাহজাহান বর্তমানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ফেনী জেলায় পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত থাকলেও লোহাগাড়া ও সন্দ্বীপ থানার ওসি থাকায় সবার কাছে তিনি ওসি শাহজাহান নামেই পরিচিত। চাকরির শুরুতে তিনি বেতন পেতেন ২ হাজার ৬০০ টাকা। বর্তমানে পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে তিনি বেতন পান ৬০ হাজার টাকা।
দুদকের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ বলেন, দুদক ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ সম্পদের মামলায় শাহজাহান ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। তদন্তের অংশ হিসেবে, দুদক ঢাকার আশুলিয়ায় শাহজাহানের ৯০ লাখ টাকা মূল্যের সাততলা বাড়িটি শনাক্ত করেছে। বাড়িটি বিক্রির চেষ্টা চলছে জানতে পেরে দুদক আদালতে ক্রোকের আবেদন করে এবং আদালত তা মঞ্জুর করে। এর আগে দুদক শাহজাহানের স্ত্রীর নামে থাকা নগরের ওয়াসায় ছয় কোটি টাকার ছয়তলা বাড়িটিও ক্রোক করেছে।
দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইমরান খান আদালতে দাখিল করা আবেদনে উল্লেখ করেন, ২০১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আশুলিয়া থানার জালালাবাদ মডেল টাউনে ৫ শতাংশ জমির উপর নির্মিত সাততলা বাড়িটি শাহজাহান তার বড় বোনের কাছ থেকে হেবা হিসেবে পেয়েছিলেন। ৯০ লাখ টাকা মূল্যের এই বাড়িটি আসলে শাহজাহান তার অবৈধ আয় দিয়ে কিনে বোনের নামে রেখেছিলেন বলে দুদকের ধারণা।
পুলিশ কর্মকর্তা শাহজাহানের বেতন-ভাতার বাইরে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠায় দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি ৭৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এরপর, তদন্তে তার স্ত্রী ফেরদৌসী আকতারের নামে ৩ কোটি ২৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের সন্ধান পায় দুদক। ফলশ্রুতিতে, একই বছরের জুলাই মাসে শাহজাহান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমানে দুটি মামলাই তদন্তাধীন রয়েছে।
দুদকের দাবি, শাহজাহানের স্ত্রী ফেরদৌসী আকতার তার স্বামীর ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ সম্পদের মালিক। নিজেকে মৎস্য ও পোলট্রি খামারি দাবি করলেও এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং তিনি মূলত একজন গৃহিণী। লালখান বাজারের সাততলা বাড়ি ছাড়াও তার নামে কক্সবাজার সদরে প্লটসহ কোটি টাকার জমি এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলাচলকারী দুটি যাত্রীবাহী বাস রয়েছে। মামলা দায়েরের পর ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর আদালত এসব সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেন।