আবছার রাফি : চলতি পথে হঠাৎ থেমে যায় সমস্ত কোলাহল-আয়োজন। সবকিছুর ভেতরে থেকেও যেন মন ভারী হয়ে ওঠে একরাশ স্মৃতির ধাক্কায়। ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে সেই স্মৃতি বর্তমান সময়-বাস্তবতার সাথে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে পরখ করে বলে—জ্ঞাতি সম্পর্কের মাঝে কেবল আপনিই আমার কাছে অদ্বিতীয় মানুষ, অভিন্ন ভরসা ছিলেন। খুব মনে পড়ে, অন্যের উপকার করার পর আপনার চোখ-মুখে পুলকবোধের যে তৃপ্তি ফুটে উঠত সেই দৃশ্যের কথা; মনে পড়ে, আমার অবর্তমানে আমাকে নিয়ে প্রশংসার যে ঝাঁপি খুলে বসতেন সেই সময়ের কথা। মনে পড়ে, একুশে পত্রিকার প্রতিটি বিভাগে কতটা ভালোবাসা-আস্থা রেখে আমাকে জড়িয়েছেন সেই কথা। আসলে ছয় বছরে সম্পাদকের সাথে আমার ছয় কোটিরও বেশি স্মৃতি বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে না; কোনটা রেখে কোনটা বলব তা ভেবে কুল পাচ্ছি না। লিখতে গেলে হয়তো দু-একটা বইও যথেষ্ট হবে না। তবুও আজ সম্পাদকের সাথে কাটানো একেবারে শেষ সময়ের স্মৃতি নিয়ে কিছু লিখতে চাই। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ঘিরে যেসব স্মৃতি বারবার হৃদয় নাড়া দিয়ে ওঠে তা একবার বলতে চাই। অবশ্যই আপনি-বিহীন এই একটি বছরে কতটা মুখ আর মুখোশের মাঝে তফাত দেখেছি, উপকার-বিশ্বাসের বদলে যাতনা পেয়েছি; তা সযত্নে ডায়েরিবদ্ধ করেছি। সেসব কথাও কোনো একদিন পাঠক, সুহৃদ-শুভার্থীদের উদ্দেশ্যে লিখব; ইনশাআল্লাহ।
সময় গত বছরের জুলাই মাস। ক্যান্সার প্রতিরোধ করছে কৰল পাতার রস; আরটিভিতে প্রচারিত এমন একটি প্রতিবেদন চতুর্দিকে চাউর হলে তা নজর কাড়ে সম্পাদকের। ক্যান্সারের বিভীষিকায় কাতর সম্পাদক হন্যে হয়ে সেই পাতা খুঁজতে থাকেন। এমনকি স্বজন-শুভার্থীদেরও বলেন পাতা সংগ্রহ করতে। কিন্তু দুদিনের প্রচেষ্টায়ও তা যোগাড় হলো না। এদিকে অফিস ও তাঁর ব্যক্তিগত কাজ দিয়ে আমাকে এতটাই ব্যস্ত রেখেছিলেন যে, দম ফেলার ফুরসতই যেন পাচ্ছিলাম না। বিকেল তিনটা। ফোন দিলেন একুশে পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক রুকন ভাই। বললেন, ‘ভাই, আজাদ ভাই আপনাকে পাতা সংগ্রহ করতে বলেছে।’ মনে মনে ভাবলাম, যেদিন কাজ বেশি দিয়ে ফেলেন সেদিন আর নতুন কোনো কাজ আসলে সম্পাদক তা আমাকে বলতে চাইতেন না। আজকেও একই কাজটি করেছেন তিনি।
সব কাজ গোল্লায় দিয়ে নেমে পড়লাম পাতা সংগ্রহে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটে বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, অধিদপ্তর ও বিভিন্ন নার্সারি মালিককে ফোন দিতে থাকলাম। সবার কণ্ঠে একই সুর—পাতা নিয়ে নিউজ হওয়ায় গুটিকয়েক যেসব গাছ আছে তাও উজাড় হয়ে গেছে। এভাবে জন-দশেককে ফোন দেওয়ার পরে একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানালেন, খাগড়াছড়ি বা কাপ্তাই রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে হয়তো পেতে পারি। কাপ্তাইয়ে থাকা পরিচিত কয়েকজনকে বললাম পাতা নিয়ে দিতে। কিন্তু কাউকে পাতা দিচ্ছে না গবেষণা কেন্দ্র। সেখানে অন্য মানুষজনও ঝাঁপিয়ে পড়েছেন পাতা সংগ্রহে। সবশেষে ফোন দিলাম পরিচিত মুখ চন্দ্রঘোনা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরীকে। জানতাম না যে, তিনি সদ্য বদলি হয়েছেন। ফোন ধরলেন নতুন ওসি শফিউল আজম বাবু। কখনও কথা হয়নি, দেখা হয়নি: এমন একজন থেকে সাহায্য নিতে খুব ইতস্তত বোধ করছিলাম। কিন্তু না। পাঁচ মিনিটের কথায় বুঝে নিলাম, পূর্ব পরিচিত না হয়েও যুগ যুগ পরিচয় থাকার মতোই তিনি আমাকে গ্রহণ করলেন।
পাতা নিয়ে আগ্রহের কথা জানালাম। ফিরতি ফোনে জানালেন, ‘ভাই, কাউকে পাতা দেওয়া হচ্ছে না, তবে আমি স্থানীয় থানায় আছি বলেই কষ্ট হলেও আমার অনুরোধ তারা রাখবেন বলে জানিয়েছেন।’ বললাম, আমি তো শহরে, পথের দূরত্ব অনেক কিন্তু পাতা খুবই জরুরি। ‘কী করা যায় দেখবেন’ বলেই কর্ণফুলীর ওপারে থাকা গবেষণা কেন্দ্রে পাঠালেন জন-পাঁচেক পুলিশ সদস্যকে। ত্রিশ মিনিট পরে এক পুলিশ সদস্য হাতে পাতা নিয়ে ওসির রুম থেকেই ছবি তুলে পাঠালেন আমাকে। পরক্ষণে ফোন দিলেন ওসি। বললেন, ‘ভাই আপনার জন্য পাতা প্রস্তুত। এখন কী করা যায়?’ ফোন দিলাম আমাদের রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধিকে। বললাম, যত দ্রুত সম্ভব যেন থানায় গিয়ে পাতাগুলো নিয়ে এবি ট্রাভেলসের গাড়ি করে শহরে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। যেই কথা সেই কাজ। সে বাইক নিয়ে দ্রুত ছুটে গেল থানায়। তাড়াহুড়া করেই পাতা নিয়ে লিচুবাগান থেকে গাড়িতে তুলে দিল।
এদিকে আমি শহরের বহদ্দারহাট বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে পায়চারি করছি। আর ফোনে গাড়ির হেলপারকে বারবার বিরক্ত করছি। সব মিলিয়ে ঘণ্টা-দেড়েকের ভেতর পাতা হাতে পেলাম। চলে গেলাম সম্পাদকের বাসায়। আমার হাতে পাতা দেখে কিছুক্ষণের জন্য থ বনে গেলেন তিনি। পরক্ষণে যে তৃপ্তির হাসিটা তিনি দিয়েছেন; মনে হচ্ছিল সুখের আকর পেলেও হয়তো মানুষ এমন পুলকবোধ করে না। অপলক চেয়ে আছেন আমার দিকে। খানিকটা আবেগাপ্লুতও হয়ে পড়ছেন। সম্পাদকের এই মায়া-জড়ানো চাহনি এখনও চোখে ভেসে ওঠে বারবার। দুই-তিন দিনের প্রচেষ্টায়ও যে পাতা যোগাড় হলো না সেই পাতা ঘণ্টা দুয়েকের ভেতর কীভাবে যোগাড় করেছি সেই গল্প তিনি পরিচিতদের এমনভাবে বলতেন, যেন আমি বিশাল কিছু ওনার জন্য করে ফেলেছিলাম। আসলে পাতা সংগ্রহের কাজটি করতে আমার কোনো কষ্ট হয়েছে বলে আমি মনে করিনি। যে মানুষটা আমার অভিভাবক তার জন্য এই কাজ তো অনায়াসেই করা যায়। কিন্তু সেদিনের ঘটনায় ওনার তৃপ্তি দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়েছি। একজন মানুষের ভেতর কতটা কৃতজ্ঞতাবোধ কাজ করলে, কতটা উচ্চমার্গীয় চিন্তা থাকলে সামান্য একটা কাজের জন্যও এতটা প্রশংসা করতে পারে। ভাবছি আর অবাক হচ্ছি।
অতিরিক্ত পেট ব্যথার দরুন মৃত্যুর মাসখানেক আগে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলেন সম্পাদক। ডাক্তার কিছু পরীক্ষা করে জানালেন, লিভারে পানি জমছে তা বের করতে হবে। তখন ব্যথা কমে যাবে। ডাক্তার এসে পেটের ডান পাশে ফুটো করে পানি বের করতে শুরু করলেন। আর সমানতালে হাতেও চলছে স্যালাইন। স্বজনরা চলে গেলেন রাত ১১টার দিকে। রাতে হঠাৎ বেড়ে যায় ব্যথা। সহ্য করতে না পেরে বিছানায় কাতরাচ্ছেন সম্পাদক। অপর বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েছেন সম্পাদকের ভাগ্নে দিদার। সে তখন দিনরাত ২৪ ঘণ্টা সম্পাদকের সঙ্গী ছিল। ব্যথা একটু কমে এলেই পত্রিকা নিয়ে তাঁর যে স্বপ্ন, অকপটে তা বলে যেতে লাগলেন। জীবনসংগ্রামে কতটা বন্ধুর পথ মাড়িয়েছেন তা বললেন। আর কাঁদছেন অঝোর নয়নে। আবার কিছু ঘনিষ্ঠ মানুষের দেওয়া আঘাতের কথাও বলে আক্ষেপ করলেন। ফাঁকে কিছু ওষুধ নিয়ে আসা আর কিছুক্ষণ পরপর নার্স-ডাক্তারদের সাথে কথা বলছিলাম আমি। এক পর্যায়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। আমি দাঁড়িয়ে আছি। একটু পর ঘুম ভেঙে গেলে বলে উঠলেন, ‘ভাই, এটা শেষ হতে হতে রাত ফুরিয়ে যাবে, তুই তো সারাদিন দৌড়াদৌড়িতে ছিলি, অনেক ক্লান্ত। স্যালাইনটা শেষ হলে নার্সদের ডাকতে হবে। তোর কষ্ট হবে।’ আমি বললাম; ‘না মামা আমি আছি আপনি ঘুমান।’ এরপর পুরো রাত দাঁড়িয়ে-ফ্লোরে বসে কাটিয়ে দিলাম। রাত নয়টা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত হাসপাতালে নির্ঘুম রাত কাটাতে যেন সেদিন একটুও খারাপ লাগেনি শরীরে। শুধু সেদিন না, সম্পাদকের জন্য এমন আরও রাত জাগতে চেয়েছিলাম কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না।
পরের দিন ফোন দিলেন। তাঁর পরিচিত একজন সাতক্ষীরা থেকে একটি কৰল গাছ পাঠাচ্ছেন। আমি যেন রাত ১২টায় জিইসি মোড় থেকে গাছটি রিসিভ করি। সেদিন রাত দশটায় অফিস শেষে আর বাসায় ফিরলাম না। সারাদিনের ক্লান্তিতে যদি ঘুম পেয়ে বসে তাহলে হয়তো গাছটি হাতছাড়া হয়ে যাবে। বসে থাকলাম জিইসি মোড়ে। রাত ১২টা পেরিয়ে গেলেও গাড়ি বা গাছ কোনোটারই দেখা মিলছে না। হঠাৎ কী এমন হলো, গাড়ি আসবে কি আসবে না তাও নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। ব্যাপারটা অসুস্থ সম্পাদককে জানাতে মন সায় দিল না। এত রাতে একজন অসুস্থ মানুষকে ফোন দিলে নিশ্চিত ঘুমের ক্ষতি হবে। যখনই ফোন দেব দেব ভাবছি তখনই কেবল মনে হচ্ছে; সারাদিন পেট ব্যথায় ছটফট করা সম্পাদক হয়তো এখন ব্যথা ভুলতে ঘুমানোর চেষ্টায় আছেন বা ঘুমাচ্ছেন। আর ফোন দেওয়া হয়নি। এভাবেই দাঁড়িয়ে আছি। বড় বাস জিইসি মোড়ে ঢুকতে দেখলেই ছুটে যাই কিন্তু না পেয়ে বারবার হতাশ হই। এভাবে সারারাত জুড়ে অর্ধশত গাড়িতে নজর রাখার পর অবশেষে রাত ১২টায় আসার বদলে ভোর পাঁচটায় এল সেই কাঙ্ক্ষিত গাড়ি। গাছটা হাতে পেয়েই নির্ঘুম রাতের কষ্ট যেন মুহূর্তেই নাই হয়ে গেল। ভাবছি, সোজা আমার বাসায় গিয়ে ঘুমাব তারপর বিকেলের দিকে সম্পাদকের বাসায় যাব। কিন্তু তাতেও মন সায় দিল না। ভাবলাম, যেই গাছের জন্য সম্পাদক অধীর আগ্রহে বসে আছেন নিশ্চয়ই সেটি হাতে পেলে তিনি কতই না খুশি হবেন। একজন অসুস্থ মানুষের মনে একটু প্রশান্তি দিতে পারাটাই হবে সার্থকতা।
মোটরবাইকে বেঁধে গাছটি সম্পাদকের বাসায় নিয়ে গেলাম। এখনও ঘুমে সম্পাদক। তাই ঘুম না ভেঙে গাছটি বাসায় থাকা সম্পাদকের ভাগ্নের হাতে দিয়ে বাসায় ফিরলাম। বাসায় ঘণ্টা দুয়েক ঘুমাতে না ঘুমাতেই কাঁপা কাঁপা স্বরে সম্পাদকের ফোন। বললেন, ‘ভাই, তুই তো সারারাত নির্ঘুম ছিলি, অনেক কষ্ট হয়েছে তোর; তোকে আরেকটু কষ্ট করতে হবে। আমি এমন কাউকে পাচ্ছি না কাজটা দেওয়ার। তোকে কাজ দিলে নিশ্চিন্তে থাকতে পারি। তাই তোকে কষ্ট করে একটু ঢাকায় যেতে হবে।’ উঠে গেলাম ঢাকার গাড়িতে। সেদিন দিনের বেলায় কোনো ঝামেলা বা আন্দোলন হওয়ার কারণে রাতের বেলায় ঢাকামুখী বাসের তীব্র সংকট। বেশি ভাগই যাচ্ছে না। স্টেশনে গাড়ির এক হেলপারকে সমস্যার কথা শেয়ার করি। তার কথা মতো অদূরে থাকা একটি গাড়িতে উঠে গেলাম। কোথাও সিট খালি নেই। দাঁড়িয়েই যেতে হবে। অবশেষে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পার করে দিলাম পুরো রাস্তা। ভোরের আলো ফোটার অল্প আগেই নামলাম ঢাকা। এখন কোনো আত্মীয় বা হোটেলে গেলে অন্তত দুই-তিন ঘণ্টা তো ঘুমাতে হবে। ততক্ষণে যদি কাজটা হাত ফসকে যায় তাহলে তো সবই শেষ। কারণ আমাকে যেতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
সরকার প্রধানের কার্যালয়ে যাচ্ছি তা যেমন স্পেশাল ব্যাপার মনে হচ্ছে তেমনি পরতে পরতে হাই সিকিউরিটির কথা ভেবে মনে ভয়ও কাজ করছে। কী বলতে, কী বলে ফেলি। নির্ঘুম চোখে সকাল সাতটায় ঢুকলাম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। এরপর সময় গড়িয়ে বিকেল দুইটা। সবকিছু ঠিকঠাক শেষ করতে পারলেও সম্পাদকের সাথে ফোনে কথা বলতে পারছিলাম না। তাই কাগজপত্র সংক্রান্ত কিছু জটিলতা তৈরি হলেও তা সম্পাদককে জানাতে পারছিলাম না। আবার ওখানকার কর্মকর্তাদেরও বারবার বিরক্ত করার সুযোগ নেই দেখে বুদ্ধি খাটিয়ে একজনকে কনভিন্স করে ফেললাম অসুবিধার কথা বলে। তিনি সহযোগিতা করলেন। কাজ সেরে জানালাম সম্পাদককে। সম্পাদক হয়তো ভেবেছিলেন—এই কাজ তো এত সহজে হওয়ার কথা নয়। অন্তত দু-এক দিন থাকতে হবে। কিন্তু দিনে দিনে কাজটা শেষ করে ফেলতে পারায় অবাক হয়ে গেলেন তিনি। এতদিন ক্যান্সারের উপর্যুপরি ধকলে ছোট হয়ে যাওয়া সম্পাদকের গলার স্বর দেখি মুহূর্তেই অনেক বড় হয়ে গেল। আমাকে ফোনে রেখে কাকে যেন বলছিলেন, আমার মতো আরেকটা ছেলে যদি তিনি পান তাহলে আর কোনো দুঃখই ওনার থাকত না। সবকিছু হাতে তুলে দিয়ে তিনি গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন। নিশ্চিন্তে থাকতেন। সৈকতে ঘুরে বেড়াতেন। গ্রামে গিয়ে মাছ ধরতেন। আরও কত কী!
আহা, সেসব আজ কেবলই স্মৃতি। আমার আত্মার আত্মীয় সম্পাদক এখন আর নেই। মনে পড়ে—মৃত্যুর দিন বায়েজিদ থেকে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ির পেছনে ছুটেছি বাইক নিয়ে। মাঝেমধ্যে নিজের প্রাইভেট গাড়ি ছেড়ে আমার ছোট্ট বাইকে সওয়ার হতেন সম্পাদক। এই ফ্লাইওভার, এ সড়কে কতশত বার দুজন বাইকে ঘুরেছি নানা কাজে। পেছন থেকে বলতেন, ‘আস্তে চালাও, এদিকে যাও, ওই দিকে যাও।’ আহা, জীবিত থাকলে উনি কোথাও গেলে আমার বাইক থাকত উনার গাড়ির সামনে। আর আজ আমার বাইক লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ির পিছু পিছু। কোনো কথা নেই। সেদিন নাছোড়বান্দা তুমুল বৃষ্টিতে মিশে গিয়েছিল আমার দুচোখের পানি। বুকের হাহাকার মিশে গিয়েছিল বৃষ্টির শব্দে। আর কেউ নেই, সত্যি কোথাও কেউ নেই। এতিম হয়ে গেলাম।
মামা, জ্ঞাতি বা তাবৎ সম্পর্কের মাঝে কেবল আপনিই আমার কাছে অদ্বিতীয় মানুষ, অবিচল ভরসা ছিলেন। ভাবতেই শিহরিত হয়ে উঠি—আপনাকে ছাড়া কীভাবে একটি বছর কাটিয়ে দিলাম। পৃথিবীর কোনো কিছুই যে আপনার অভাব পূরণ করতে পারবে না; এই অনিবার্য সত্য মেনে নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে আমরণ। আপনি চলে গেলেন, আমাকেও যেতে হবে, হয়তো সেদিনই এই অতৃপ্ত আত্মা অন্যরকম প্রশান্তিতে ভরে উঠবে। মহান আল্লাহ আপনাকে জান্নাতের সুশীতল ছায়ায় রাখুন, আজীবন বিনম্র শ্রদ্ধায় আপনি গেঁথে থাকবেন আমাদের অন্তরাত্মায়…
লেখক : স্টাফ রিপোর্টার, একুশে পত্রিকা।