চট্টগ্রাম : রবিবার চট্টগ্রামে দিনভর সংঘর্ষে অন্তত ৪০০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ২৫০ জনের বেশি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
রবিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রামের সড়কে যানবাহন চলাচল কম ছিল। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বহদ্দারহাট এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের সংঘর্ষ চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে, যাতে অনেকে আহত হন।
চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তুহিন শুভ্র জানান, রবিবার রাত ১১টা পর্যন্ত ১৯১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩০ জন গুলিবিদ্ধ এবং বাকিরা লাঠি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর, তাঁরা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।
চমেক হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, আইসিইউতে চিকিৎসাধীন তিনজন হলেন মিনহাজ রনি, আদনান ও শাহেদ। আহতদের মধ্যে ৯ বছর বয়সী শিশু মো. শাহাদাতও রয়েছে, যে সদরঘাট এলাকায় সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়।
চমেক হাসপাতাল ছাড়াও পার্কভিউ হাসপাতালে ১৩ জন, ন্যাশনাল হাসপাতালে ১০ জন এবং চট্টগ্রাম মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালে ৫ জন চিকিৎসাধীন।
রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি চট্টগ্রাম মহানগর যুব প্রধান আবু নাঈম তামজিদ জানান, সংঘর্ষে অসংখ্য আহত ব্যক্তিকে ঘটনাস্থলে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, কদমতলী, টাইগারপাস, নিউমার্কেট, ওয়াসা ও আন্দরকিল্লা এলাকায় তাদের টিম কাজ করেছে এবং ১৫০ জনের বেশি আহতকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ নেতা ফরহাদুল ইসলাম রিন্টুর দাবি, বিএনপি-জামায়াত কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নামে তাণ্ডব চালিয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান ও সাইম নামে আরেকজন গুরুতর আহত হয়ে জিইসি মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর পুলিশ-ছাত্রলীগ মিলেমিশে গুলি করেছে। এতে আমাদের দুই শতাধিক ছাত্র আহত হন। অনেকের অবস্থা গুরুতর। পুলিশ ছাত্রলীগ-যুবলীগের পক্ষ নিয়েছে। আমাদের অনেক ছাত্রী তাদের গুলিতে এবং হামলায় আহত হয়েছে। যদি পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এভাবে গুলি বর্ষণ করে তাহলে সামনে তাদেরকে উচিত জবাব দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, সংঘর্ষে আহত ১৯১ জন চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। চট্টগ্রাম ছাড়াও পটিয়া এবং ফেনী থেকেও আহতদের এই হাসপাতালে আনা হয়।
পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা ওমর ফারুক জানান, পটিয়ায় রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষ হয়। দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা উপজেলার সামনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীরা তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ১১ জন গুলিবিদ্ধসহ ১৩ জনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাকিদের পটিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনার পর আন্দোলনকারীরা পটিয়া উপজেলার সামনে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মার্কেট ‘আওয়ামী সুপার মার্কেটে’ থাকা সংসদ সদস্যের অফিস ভাঙচুর করে। মার্কেটের সামনে পার্কিংয়ে থাকা ১০-১২টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
অপরদিকে, সাতকানিয়া কেরানির হাট এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে বিকাল ৩টার দিকে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করে। এতে স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পরে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ওসমান আলীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়। ছাত্রলীগ-যুবলীগের ১৯-১২টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ফেনীতে সংঘর্ষে মাথায় গুলিবিদ্ধ গুরুতর আহত তিন জনকে চমেক হাসপাতালে আনা হয়। বাকিরা চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট, তিন পুলের মাথা, সদরঘাট, আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, দেওয়ানহাট, বহদ্দারহাট, আন্দরকিল্লা, টেরিবাজার, লালদিঘির পাড়, ওয়াসা, নন্দন কানন, লালখান বাজারসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিন বলেন, সংঘর্ষে আহত হয়ে দুই শতাধিক ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই ছররা গুলিতে আহত। সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।