সংকট নিরসনে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগসহ ৬ দফা প্রস্তাব ২১ বিশিষ্ট নাগরিকের


ঢাকা : দেশের বিরাজমান সংকট নিরসনে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগসহ ৬ দফা প্রস্তাব দিয়েছে ২১ বিশিষ্ট নাগরিক। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এই প্রস্তাব দেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমানে বিরাজমান ভয়াবহ সহিংস ও নৈরাজ্যকর অবস্থায় আমরা অত্যন্ত বিচলিত ও উদ্বিগ্ন বোধ করছি। ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচার হত্যাকাণ্ড, আন্দোলনরত জনতার উপর ব্যাপক গুলিবর্ষণ, শিশুহত্যা, জনগনের সম্পত্তি নাশ, গণগ্রেপ্তার, হয়রানি ও নির্যাতনের পর সর্বত্র আতংক, অবিশ্বাস ও ক্রোধের যে পরিবেশ বিরাজ করছে, তা বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তার জন্য ভয়ংকর হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে নিচের পদক্ষেপগুলো নেয়া অতিজরুরী বলে আমরা মনে করি।

১) সরকারকে এখনি আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উপর গুলিবর্ষণ ও হামলা বন্ধ করতে হবে। সেনা ও অন্যান্য বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

২) দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন নিয়ে প্রহসন, সর্বস্তরে দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও মানুষের উপর নির্যাতনের কারনে জনমনে সঞ্চিত ক্ষোভ আজ গনআন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এই গণআন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকারকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে হবে এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে সাংবিধানিকভাবে বা প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে একটি জাতীয় সরকার বা অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

৩) এই জাতীয় (অন্তবর্তীকালীন) সরকারের প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে থাকবে, জাতিসংঘের নেতৃত্বে জুলাই হত্যাকাণ্ড ও নাশকতামূলক ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা করা, শিক্ষাঙ্গনে নির্যাতন বন্ধের লক্ষ্যে কঠোর আইনী কাঠামো প্র্রতিষ্ঠা, পুলিশ প্রশাসন, দেশের বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দূর্ণীতি দমন কমিশন এবং সরকারি প্রচারমাধ্যমসহ প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করা এবং অবিলম্বে সব দলের অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

৪) অন্তবর্তীকালীন সরকার এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, সাংবাদিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং তরুণদের সংগঠনগুলোসহ প্রয়োজনীয় সকল সংগঠনের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলবে।

৫) অবাধ নির্বাচনে নির্বাচিত নতুন সরকার সংসদের প্রথম অধিবেশনেই দেশে সকল ক্ষেত্রে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, সুশাসন ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করতে এবং ক্ষমতার ভারসাম্য ও জনগনের অধিকার নিশ্চিত করতে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

৬) বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের সংস্কার করতে হবে। এই সংস্কারের সূচনা করতে হবে অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই।

আমরা মনে করি, বাংলাদেশ আজ এক মহাসংকটের সামনে দাড়িয়ে। এই সংকটের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহন করলে অন্যদের স্বাগত জানাতে হবে। সকল প্রকার প্রতিশোধমূলক ও হিংসাত্নক কার্যক্রম থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশকে সকল ব্যক্তি, পরিবার ও দলের স্বার্থের উর্ধ্বে স্থান দিতে হবে।