দক্ষ সেনা কর্মকর্তার হাতে কারা মহাপরিদর্শকের গুরুদায়িত্ব


শরীফুল রুকন : কারা অধিদপ্তরে নতুন অধ্যায়ের সূচনা! ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেনের হাতে এখন কারা মহাপরিদর্শকের দায়িত্ব। গত ১১ আগস্ট, এ দক্ষ সেনা কর্মকর্তা, কারা মহাপরিদর্শকের গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি এখন কারাগারকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেনের জন্ম চট্টগ্রামের মিরসরাই পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত মোমিনটোলা গ্রামে। তিনি প্রয়াত ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ ফজলুল করিমের পঞ্চম সন্তান।

১৯৯৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর, সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেনের জীবনে একটি স্মরণীয় দিন! সেদিন ৩১ তম বিএমএ লং কোর্সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে পদাতিক কোরে কমিশন লাভ করেন তিনি। সেই থেকে শুরু হয় তাঁর এক অনন্য সাফল্যগাঁথা।

সেনাবাহিনীর এই বীর সন্তান, যেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ থেকে তিনি পিএসসি ডিগ্রী অর্জন করেন, জ্ঞানের আলোয় নিজেকে আলোকিত করেন। আর ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, ঢাকা থেকে তিনি এনডিসি ডিগ্রী অর্জন করেন, দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে।

এই মেধাবী সামরিক অফিসারের জ্ঞানের তৃষ্ণা যেন অসীম। বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমিতে পা রেখেই তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রথম শ্রেণিতে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। বিইউপি থেকে ২০০৯ এবং ২০২৩ সালে যথাক্রমে মাস্টার্স ইন মিলিটারী সাইন্স এবং মাস্টার্স ইন সোশাল সাইন্স ডিগ্রি লাভ করেন, যেন এক অর্জনের শিখরে আরও এক ধাপ এগিয়ে যান!

বিভিন্ন কমান্ড, স্টাফ ও ইন্সট্রাকশনাল এপয়েন্টমেন্টে নিজের দক্ষতা ও নিষ্ঠার ছাপ রেখেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশনস ট্রেনিং (বিপসট) এবং স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সে (এসএসএফ) দায়িত্ব পালন করে তিনি প্রমাণ করেছেন তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বগুণ।

বিশ্ব শান্তির জন্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোতাহেরের অবদান অতুলনীয়! ইউএনএমআইএসএসে কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাটেলিয়ানকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছেন।

শুধু তাই নয়, ইউএনএএমএমএসআইএলে জাতিসংঘের সামরিক পর্যবেক্ষক এবং ইউএনএমআইএলে ফোর্স হেড কোয়ার্টার্স অপারেশনাল স্টাফ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে তিনি প্রমাণ করেছেন তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বগুণ।

জেনারেল মোতাহের, তিনি শুধু একজন সামরিক কর্মকর্তাই নন, একজন প্রতিভাবান লেখকও। মিরপুর পেপারসহ বিভিন্ন সামরিক জার্নালে তাঁর লেখা যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে, পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দেয়। খেলাধুলার প্রতি তাঁর ভালোবাসাও চিরন্তন। একজন দক্ষ গলফার হিসেবে তিনি সবার প্রিয়। আর বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক হিসেবে তাঁর সাফল্যের গল্প তো সোনালী অক্ষরে লেখা!

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন, এই গুণী ব্যক্তি এবার নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করলেন! কারা মহাপরিদর্শক হিসেবে তিনি এখন দায়িত্বের ভার নিয়েছেন, যেন এক অভিভাবকের মতো কারাগারের অন্ধকারে আলোর সন্ধান দেবেন! তাঁর নেতৃত্বে কারাগার হয়তো শুধু শাস্তির প্রতিষ্ঠান নয়, সংশোধনের পথ দেখাবে!

নতুন আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেনের কণ্ঠে শোনা গেল এক দৃঢ় প্রত্যয়! কারাগারের সবাই, জেলার থেকে শুরু করে কারারক্ষী পর্যন্ত, নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলেই কারাগারে আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না! তাঁর এই আশাবাদ যেন এক নতুন আলোর দিশা দেখায়।

সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কারাগার হবে শুধরে নেওয়ার এক আদর্শ প্রতিষ্ঠান, এমন এক স্বপ্নের কথা শোনা গেল সৈয়দ মো. মোতাহার হোসেনের কণ্ঠে। এমনকি আটক বন্দীদের প্রতিও সঠিক সেবা নিশ্চিত করার এক মানবিক আহ্বান জানালেন তিনি।

নতুন আইজি প্রিজনের কণ্ঠে শোনা যায় সহমর্মিতার সুর! কারাগারের দায়িত্বরত সবার কঠিন পরিশ্রম ও নিষ্ঠার কথা স্বীকার করলেন তিনি। জেলার, জেল সুপার, কারারক্ষী- প্রত্যেকেই চাপের মধ্যে থেকেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাঁদের এই ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন কারাগারকে একটি সেবা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করার। কারারক্ষীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, এবং একটি সুসংগঠিত বাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করবেন তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে কারা বিদ্রোহের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আইজি প্রিজন। তবে তাঁর কণ্ঠে আছে এক দৃঢ়তা, এক আশাবাদ। সবাইকে উদ্বুদ্ধ করছেন তিনি, সবাই মিলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করলে এমন পরিস্থিতি আর তৈরি হবে না! জেলার, জেল সুপার, কারারক্ষী, এমনকি আটক বন্দীদেরও ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

সবার সচেতনতা এবং যথাযথ ব্যবস্থাই পারে এমন পরিস্থিতি রোধ করতে, তাঁর এই বিশ্বাস যেন এক নতুন আশার আলো দেখায়। শুধু তাই নয়, ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতির কথাও উল্লেখ করেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন। তাঁর এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি যেন সবার মনে এক স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে।