নজরুল কবির দীপু : বাংলাদেশের পোশাক খাতকে লক্ষ্য করে দেশি-বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এই সংকট দ্রুত সমাধান না হলে দেশের পুরো পোশাক শিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
বিকেএমইএর সভাপতির মতে, তৈরি পোশাক শিল্প বর্তমানে কঠিন সময় পার করছে। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, একই সঙ্গে বিদেশি ক্রেতারাও শীত ও গ্রীষ্মের অর্ডার কমিয়ে দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতির ফলে বিদেশি ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এবং নতুন অর্ডার দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন।
নানামুখী উদ্যোগের পরও ‘শ্রমিক অসন্তোষের’ জের ধরে আশুলিয়া, সাভার ও টঙ্গীতে সোমবার ১১৯টি কারখানা বন্ধ রাখা হয়। মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় মঙ্গলবার আশুলিয়ায় আরও ৪০টি কারখানা বন্ধ ছিল। গাজীপুরেও কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করে।
কারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে বলা যায়, দীর্ঘদিন ধরে চলা এই অস্থিরতা এবং এর ফলে বিদেশি ক্রেতাদের অনীহা, সামগ্রিকভাবে দেশের পোশাকশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে অশনি সংকেত বহন করছে।
কিছু ব্যক্তি পরিকল্পিতভাবে পোশাক কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর চালাচ্ছে যাতে রপ্তানি আদেশ অন্য দেশে সরে যায়। সাধারণ শ্রমিকদের এই সহিংসতার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। রপ্তানিমুখী এই শিল্পকে বাঁচাতে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। রাজনৈতিক নেতা, শ্রমিক নেতা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে, নাহলে এই শিল্পে অস্থিরতা দেখা দেবে যা দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে।
আমরা মনে করি, একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করছে। তারা শ্রমিক অসন্তোষের নামে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা পাঠাচ্ছে।
আমরা জানি, পোশাকশিল্প দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। সুতরাং, সরকারকে এই শিল্পে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সবরকম পদক্ষেপ নিতে হবে। শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে বহিরাগতদের ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তাই এই ইন্ধনদাতাদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।
অতীতে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় পোশাক শিল্প ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় এই খাত প্রতিদিন বিপুল অর্থ হারিয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে পোশাক শিল্প যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল, ঠিক তখনই আবার এই শিল্পে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
কিছু কারখানা মালিক বলছেন, কিছু পক্ষ পুরনো ঝুট ব্যবসায়ীদের সরিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এই সুযোগে তারা মালিকদের কাছে নিজেদের গুরুত্ব প্রমাণের চেষ্টা করছে।
আবার প্রতিটি কারখানার শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া ভিন্ন। উদ্বেগের বিষয় হল, এবার কিছু শ্রমিক সুনির্দিষ্ট দাবির পরিবর্তে অযৌক্তিক দাবি তুলে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তাদেরকে উসকানি দিচ্ছে কিছু মহল। পোশাক খাতে নাশকতা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শিল্পে অস্থিতিশীলতার উসকানিদাতা হিসেবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ইসতিয়াক আহম্মেদ হৃদয়কে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আওয়ামী লীগ সরকারের গত সাড়ে ১৫ বছরে পোশাক খাতে মজুরি ইস্যু ছাড়া অন্য কোনো ইস্যুতে আন্দোলন হয়নি। এখন মজুরির বাইরে নানা ইস্যু নিয়ে আন্দোলন প্রমাণ করে, এর পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।
দেশের পোশাক শিল্পে ‘অসন্তোষের’ পেছনে বারবার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ওঠায়, কর্তৃপক্ষকে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
আমরা জানি, আশির দশকে শ্রীলংকায় যখন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হলো, তখন সেখান থেকে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশে চলে আসে। এখন আমাদের দেশে এমন অবস্থা তৈরি করে কেউ কি তার দেশে এটাকে নিয়ে যেতে চাইছে, সেই প্রশ্ন উঠছে।
বর্তমান রিজার্ভ সংকটের সময়ে, রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, একুশে পত্রিকা।