একুশে প্রতিবেদক : কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় ভূমি অফিসকে দুর্নীতিমুক্ত করার লক্ষ্যে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসিল্যান্ড) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে মুসলিমা। ইউনিয়ন পর্যায়ের সকল ভূমি কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত ফি আদায় থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এসিল্যান্ড উম্মে মুসলিমা বলেন, “জমির নামজারির ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত মোট ১১৭০ টাকা ছাড়া অতিরিক্ত কোনো ফি প্রযোজ্য নয়।” অযথা হয়রানি বা অতিরিক্ত অর্থ দাবির শিকার হলে ভূক্তভোগীদের তাঁর সাথে যোগাযোগের আহ্বান জানান তিনি।
ভূমি ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণের ফলে এখন যে কেউ ঘরে বসেই অনলাইনে নামজারির আবেদন করতে পারেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে আবেদনকারী নিজের মোবাইল নম্বরের পরিবর্তে তৃতীয় পক্ষের নম্বর ব্যবহার করে, যা অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে বলে উল্লেখ করেন এসিল্যান্ড উম্মে মুসলিমা।
উম্মে মুসলিমা মেঘনাবাসীকে জমির নামজারির সময় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আবেদন না করার এবং কারও সাথে অতিরিক্ত আর্থিক লেনদেনে না জড়ানোর আহ্বান জানান। তাঁর এসব উদ্যোগ ভূমি অফিসের দুর্নীতি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশের ভূমি অফিসগুলোর ইতিহাসে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। নাগরিকদের ন্যায্য সেবা পেতে হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনা প্রায়শই শোনা যায়। উম্মে মুসলিমা এই পরিস্থিতিকে পাল্টানোর দৃঢ় সংকল্প নিয়েছেন। তিনি কেবল সেবা দিতে এসেছেন তা নয়, তিনি সেবার মানসিকতা এবং নৈতিকতার আদর্শ নিয়ে এগিয়ে চলছেন। ভূমি অফিস থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে তিনি প্রথম থেকেই কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন।
ভূমি অফিসসহ মেঘনা উপজেলার সকল ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত ‘ফি’ আদায়ের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন তিনি। কোনো কর্মকর্তা যদি জমির নামজারি বা অন্য কোনো ভূমি সেবায় অতিরিক্ত অর্থ দাবি করেন, সেই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। ভুক্তভোগী কোনো ব্যক্তিকে হয়রানির শিকার হতে দেখলে বা তাদের থেকে বাড়তি ফি আদায় করা হলে তাঁরা সরাসরি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন উম্মে মুসলিমা। তাঁর এই অবস্থান ভূমি সেবার ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
জমির নামজারি প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষ প্রায়শই অসুবিধার সম্মুখীন হন। অনেকেই সঠিক তথ্যের অভাবে তৃতীয় পক্ষের কাছে ধোঁকা খেয়ে থাকেন। উম্মে মুসলিমা এই সমস্যার সমাধানে স্পষ্ট ও স্বচ্ছ তথ্য প্রদান করছেন। তিনি জানিয়েছেন, জমির নামজারির জন্য সরকার নির্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত কোনো অর্থ দিতে হবে না।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, কোর্ট ফি ২০ টাকা, নোটিশ জারি ফি ৫০ টাকা, রেকর্ড সংশোধন ফি ১০০০ টাকা এবং মিউটেশন খতিয়ান ফি ১০০ টাকা সহ সর্বমোট ১১৭০ টাকা জমির নামজারির জন্য প্রয়োজন। এই তথ্য জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে উম্মে মুসলিমা অসাধু তৃতীয় পক্ষের অর্থ আদায়ের পথ বন্ধ করেছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টা জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি ভূমি সেবায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
এসিল্যান্ড উম্মে মুসলিমা শুধু দুর্নীতিমুক্ত ভূমি সেবা নিশ্চিত করাই নয়, ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তিনি জানিয়েছেন, এখন নাগরিকেরা ঘরে বসেই নামজারির আবেদন করতে পারবেন। ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আরও ডিজিটাল এবং স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে এই আধুনিকায়ন অনেক ক্ষেত্রে সেবা প্রাপ্তির প্রক্রিয়াকে সহজ করে দিয়েছে।
তবে, অনেক নাগরিক নিজের মোবাইল নম্বর ব্যবহার না করে তৃতীয় ব্যক্তির মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে, যার ফলে ওই তৃতীয় ব্যক্তি অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার সুযোগ পান। উম্মে মুসলিমা এই বিষয়টিও জনগণকে সচেতন করে দিচ্ছেন, যাতে তাঁরা সরাসরি নিজেরাই এই কাজ করতে পারেন এবং তৃতীয় পক্ষের প্রতারণার শিকার না হন। এটি ভূমি ব্যবস্থাপনায় আরও এক ধাপ স্বচ্ছতা এবং সেবার মান বৃদ্ধি করেছে।
মেঘনা ভূমি অফিসে সেবা নিতে যাওয়া জাকির হোসেন বলেন, মেঘনাবাসী নতুন এসিল্যান্ড উম্মে মুসলিমার নেতৃত্বে ভূমি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নতুন আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় ইতোমধ্যে যে পরিবর্তন তিনি এনেছেন, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। নামজারি করতে আমার অতিরিক্ত টাকা লাগেনি, কাউকে ঘুষ দিতে হয়নি।
তিনি আরও বলেন, মেঘনা উপজেলার ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন এবং দুর্নীতিমুক্ত করার যাত্রায় নতুন এসিল্যান্ড এক আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর নেতৃত্বে মেঘনা উপজেলার জনগণ ভূমি সেবায় স্বচ্ছতা এবং নির্ভরযোগ্যতার এক নতুন দিগন্ত দেখতে পাচ্ছে।