কালুরঘাট সেতু নিয়ে নিন্দুকদের জবাব দিলেন বাদল, বললেন এই আমলেই কাজের সূচনা

চট্টগ্রাম : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই আমলেই কালুরঘাট সেতুর কাজের সূচনা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল। একুশে পত্রিকার সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এই আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমি প্রাণপণ চেষ্টা করছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই আমলে এই ব্রিজের কাজ শুরু করতে।

এসময় কালুরঘাট সেতু নিয়ে যারা রাজনীতি করছেন, নিন্দায় ব্যস্ত- তাদেরও জবাব দিলেন বাদল। মুখ খুললেন বোয়ালখালীবাসীর স্বপ্নের কালুরঘাট সেতু নির্মাণের পথে তার আন্তরিকতা সত্ত্বেও অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিবন্ধকতা নিয়ে।

মঈন উদ্দিন খান বাদল বলেন, ‘এটা ছেলে খেলা নয়। আমরা অনেকেই সস্তা বাহাদুরি করার জন্য বলছি ওয়ান-টুতে এরকম একটা সেতু করে দেবো। মূল রাস্তার উপর ফ্লাইওভার করা আর কর্ণফুলির উপর রোড কাম রেলসেতু করার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য আছে। এটা দয়া করে যে কোনো বিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন।’

তিনি বলেন, ‘কিছু জিনিস বারংবার বলার পরও মানুষকে কালুরঘাট সেতু নিয়ে অনেকে বিভ্রান্ত করছে। কালুরঘাট সেতু নিয়ে যেটা আমার বলার জায়গা (পার্লামেন্টে) সেখানে আমি ১৫ বারের বেশি বলেছি। আমি এতটুকু পর্যন্ত বলেছি, মাল সাহেব আপনারা বাংলাদেশের সর্বত্র ব্রিজের জন্য পয়সা পান, কালুরঘাটের জন্য পান না। কালুরঘাট সেতুটা মাত্র ১ হাজার-১২শ’ কোটি টাকার সেতু। এটার জন্য ফরেন এসিসটেন্ট লাগবে কেন? আমার বিতর্কের জায়গায় আমি বিতর্ক করে যাচ্ছি।’

‘আমি বারবার বলেছি, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের ঘুনধুম পর্যন্ত রেলসড়ক প্রকল্পটা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ৪-৫টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। এটা সবার জানা থাকা উচিত যে, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গেলে চারটি সেতু করতে হবে। কালুরঘাট, শঙ্কের উপর সেতু লাগবে, মাতামুহুরীর উপর সেতু লাগবে এবং বাঁকখালীর উপর সেতু লাগবে। এই সেতু না করে রেললাইন তো আপনি নিয়ে যেতে পারবেন না। হুয়েন ইট ইজ অ্যা প্রায়োরিটি প্রজেক্ট অফ দ্যা গর্ভনমেন্ট দ্যান ইট উইল বি মাসট।’ যোগ করেন জাতীয় রাজনীতির এই পরিচিত মুখ।

এটাকে প্রায়োরিটি প্রকল্প করার পেছনে নিজে কিঞ্চিত ভূমিকার রেখেছেন দাবি করে বাদল বলেন, ‘আমি পাল্টা প্রশ্ন করতে চাই, সরকার লক্ষ-কোটি টাকা খরচ করে ঘুনধুম পর্যন্ত সড়ক-টড়ক করে ফেললো। কিন্তু কালুরঘাট যদি না থাকে ট্রেনটা গোমদন্ডি পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি? ওনাদের মাথায় এটা আসে না কেন এই প্রকল্পটি শেষ করতে হলে কালুরঘাট সেতু অবশ্যই অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে। অলরেডি এই অগ্রাধিকার প্রকল্পের কাজ হচ্ছে এবং এটা হতে গেলে কালুরঘাট সেতুর কাজও সম্পন্ন করতে হবে। না হলে এই প্রকল্পের দুই পয়সার কোনো মূল্য নেই।’

কালুরঘাট সেতু নির্মাণ-প্রচেষ্টায় যুক্ত হয়েই নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন মঈন উদ্দিন খান বাদল। সেই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, যখন ডুয়েল গেজের কথা আসল তখনই বন্দর কর্তৃপক্ষ বলে বসলো ব্রিজটা ঊঁচু করতে হবে। কেন উঁচু করতে হবে? অনায়াসে যেন ওটার নিচ দিয়ে জাহাজ চলাচল করতে পারে। কেন জাহাজ চলাচল করবে- ওটা বন্দরের এলাকা। আপনি লক্ষ করবেন কালুরঘাট পর্যন্ত এখন বন্দরের জাহাজ ভিড়ে। এটা করতে তারা বাধ্য হয়েছে। কারণ ওদিকে তো আর জায়গাই নেই। বন্দরের কথা হলো আমাদের উপরের দিকে যেতে হবে তখন যেন এই ব্রিজ আমাদের প্রতিবন্ধক না হয়। অথচ অনেকেই অনেক পণ্ডিতী করছেন। কিন্তু সোজা কথাটা বলছেন না। ব্রিজটা যখন ঊঁচু হবে তখন এটার ল্যান্ডিং কোথায় গিয়ে নামবে? যত ঊঁচু হবে ল্যান্ডিং তত দূরে হবে। তাহলে আগে আপনি পরিকল্পনা করছেন ৩শ’ ফুট দূরে গিয়ে ল্যান্ডিং হবে, এক হাজার ফুটে যাবে। এখন আপনি ব্রিজকে করে ফেলছেন একশ’ ফুট ঊঁচু, আপনার ল্যান্ডিং অনেক দূরে চলে যাবে। এখন যখন এই বিষয়টা আসল তখন দেখা গেল, গোমদন্ডি পর্যন্ত ল্যান্ডিংয়ের সমস্যা নেই। রেলকে নামানোর জন্য একটা নির্ধারিত স্লোব আছে, সেটা গোমদন্ডির জন্য প্রযোজ্য, জানালিহাটের জন্য প্রযোজ্য। আমি জানালিহাট স্টেশনটা মন্ত্রীসহ নিজেই উদ্বোধন করে দিলাম। এখন স্টেশনের উপর দিয়ে চলে যাবে। সো, দিজ ইজ অ্যা টেকনিক্যাল প্রবলেম। এ টেকনিক্যাল কাজটি এপ্রোচের পর এপ্রোচ করে আমি লেগেই আছি রেলমন্ত্রণালয়ের সাথে।’

দক্ষিণ কোরিয়া এই সেতু নির্মাণে সম্মতি জ্ঞাপন করেছে জানিয়েছে উল্লেখ করে বাদল বলেন, ‘তারা সম্মতি জানিয়েছে ঠিক, কিন্তু প্রথমেই বাংলাদেশ রেলওয়ের ৮৭০ কোটি টাকার প্রাথমিক পরিকল্পনাকে রিজেক্ট করে দিয়েছে। বললো, এটা দিয়ে হবে না। তারা এখানের মাটি-পাটি নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা তাদের মতো ডিজাইন করে জানাল সাড়ে ১২শ’ কোটি টাকা লাগবে। তারা তাদের প্রস্তাবনা, আর্থিকব্যয় বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বিশেষ করে রেলওয়ে এটাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বললো অলরাইট। অলরাইট বলার পর, বাংলাদেশের নিয়ম হলো- একটা এক্সটারনাল রিসোর্স ডিভিশন (ইআরডি) আছে, আপনি বিদেশ থেকে ১ টাকা নেন আর এক হাজার কোটি টাকা নেন আপনাকে ইআরডি’র সাথে চুক্তি করতে হবে। এবং সেই চুক্তিতে নির্ধারিত মন্ত্রণালয় তখন যুক্ত হয়। এখানে আমাকে রেলওয়ে বললো যে, আগস্ট মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধি আসবে, সেটা আমি ফেসবুকে জানিয়েছি। কিন্তু আগস্ট মাসে তারা আসলো না। তখন দেখলাম অনেকেই ফেসবুকে নানারকম কুমন্তব্য করছে। আমি সেসমস্ত সদস্যদের বলছি, দক্ষিণ কোরিয়ার যে প্রতিনিধি আসেনি সেখানে তাদের একটা ছোট্ট নোট আছে। রেলওয়েকে পাঠানো নোটটা হলো- আমাদের দেশের বিরাজিত বর্তমান অবস্থায় তাদের প্রতিনিধি আসবে না। টাকাটা দেবে তারা। আর আমার দেশে রীতিমতো যুদ্ধ। সেকারণে তারা বলল, আমরা এখন আসছি না। পরবর্তী সময়ে আসব। এটা তারা কী দোষ করেছে? আপনার কাছে আপনার কালুরঘাট সেতু গুরুত্বপূর্ণ। তার তাছে আনবিক বোমা থেকে বাঁচাটা গুরুত্বপূর্ণ। সেটার পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ কোরিয়া চিঠি পাঠিয়েছে ইআরডিতে যে আমরা এই প্রকল্পে অর্থায়নে রাজি আছি, যদি আমাদের এই শর্তগুলো বিবেচনা করা হয়। শর্তগুলো বিবেচনা করে রেলকর্তৃপক্ষ জবাব দিয়েছে। এই জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ কোরিয়া টিম আবার জবাব দিয়েছে, আমরা অর্থায়ন করবো। বাংলাদেশকে বলতে হবে আমরা অর্থায়ন নেব। এ কর্মটি সম্পাদনের পর দক্ষিণ কোরিয়া দল যথাসময়ে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে আসবে। এসে ইআরডির সাথে চুক্তি সম্পন্ন করবে। সেই চুক্তি সম্পন্ন হলে এই ব্রিজের টেন্ডার হবে।’

মঈন উদ্দিন খান বাদল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন তার একটা ড্রিম- চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলসড়ক। এই ড্রিমটি বাস্তবায়নের পথে কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়নের পদক্ষেপ আমরা নেব। আমি আশা করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন কাজ করে অন্য জায়গাকে এগিয়ে নিয়েছেন এটাকেও এগিয়ে নেবেন।

# রোহিঙ্গা সুরক্ষায় এমপি বাদলের প্রস্তাবটিই আন্তর্জাতিকভাবে এগোচ্ছে
# মহিউদ্দিনের সমালোচনায় গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকলে তাতে অন্যায় নেই : গৃহকর ইস্যুতে বাদল
# আমার রক্ত কি পানির দামে বিক্রি হবে-প্রশ্ন এমপি বাদলের