চট্টগ্রাম : বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের পর অবশেষে চট্টগ্রাম ওয়াসার বিতর্কিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ ও পরিচালনা পর্ষদকে অপসারণ করেছে সরকার। বুধবার (৩০ অক্টোবর) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বিভাগের উপ-সচিব মো. আব্দুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
এরই মধ্যে একেএম ফজলুল্লাহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ম্যানেজ করার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। তাই অনতিবিলম্বে চট্টগ্রাম ওয়াসার বিতর্কিত ও নানা অনিয়মে অভিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহর আমলে সংঘটিত সকল দুর্নীতি-অনিয়মের তদন্ত করে শাস্তির আওতায় আনা ও তার দেশত্যাগে দ্রুত নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি জানিয়েছে ক্যাব।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের প্রেসিডেন্ট জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা প্রেসিডেন্ট আলহাজ আবদুল মান্নান, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু হানিফ নোমান এই দাবি জানান।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, বহু বিতর্কে ও অনিয়মে জড়িত ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহকে অপসারণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চট্টগ্রামবাসীকে একজন দুর্নীতিবাজ ও বহু অনিয়মের হোতাকে অপসারণ করে ওয়াসার মতো একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের অপশাসন ও দুঃশাসনের কবল থেকে উদ্ধার করল। চট্টগ্রামবাসীকে একজন স্বৈরশাসকের দোসরের হাত থেকে উদ্ধার করে ওয়াসাকে জনগণের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার সুযোগ করে দিল।
বিগত সরকারের আমলে এই বিতর্কিত এমডির বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ থাকলেও তাকে স্বপদে বহাল রেখে বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত ও অভিযুক্ত ব্যক্তির ব্যবস্থাপনায় তদন্ত টিম তদন্তকার্য সম্পাদন করে পরে তাকে ক্লিন সনদ প্রদান করে জনগণের সাথে তামাশা করেছে বলেও অভিযোগ করেন ক্যাব নেতারা।
নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বিগত আওয়ামী সরকার আমলে নিয়োগ পাওয়া সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে। সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের পর অনেকেই পদ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও বিগত সরকারের আমলে ৮ দফায় ১৬ বছর অবৈধভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে পাওয়া চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি পদ না ছেড়ে নানা চক্রান্তে নিয়োজিত থেকে নির্লজ্জভাবে চট্টগ্রাম ওয়াসাকে অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যসহ নিজের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন।
এই সময়ের মধ্যে ১৪ বারের বেশি পানির দাম বাড়িয়ে চট্টগ্রামবাসীর ওপর অতিরিক্ত দামের বোঝা চাপিয়েছেন। এখনো শহরের এক-তৃতীয়ংশ মানুষ ওয়াসার পানি পায় না। আর ময়লা, লবণাক্ত পানির যন্ত্রণা ও ভূতুড়ে বিলের যন্ত্রণায় জর্জরিত। ওয়াসার বাস্তবায়ন করা ও চলমান প্রতিটি প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। সর্বশেষ নিজের আত্মীয়স্বজনকে পদোন্নতি দেয়া, এমনকি নিজের মেয়ের প্রতিষ্ঠানকে সুয়্যারেজ প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ দেয়াসহ হাজারো অনিয়মে জড়িত। ইতোমধ্যেই তার আত্মীয় ও ওয়াসা কর্মকর্তারা দেশত্যাগ করেছেন। অপসারিত এমডি ফজলুল্লাহ যে কোনো সময় দেশত্যাগ করতে পারেন। তাই অতিদ্রুত তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা না হলে আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের মতো তিনিও পালিয়ে যাবেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ক্যাব নেতারা।