‘বিএনপি ২০০১ সালের চেয়ে শতগুণ বেশি বীভৎসতা নিয়ে হাজির হবে’

চট্টগ্রাম : ‘২০১৪ সালে বিএনপির ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ এখনো চলছে। আজ অবধি আনুষ্ঠানিকভাবে তারা সেই অবরোধ প্রত্যাহার করেনি। সাংগঠনিকভাবে তারা কতটা বিপর্যস্ত হলে, রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার কত সর্বোচ্চ জায়গায় উপনীত হলে এরকম হতে পারে সেটা বিএনপি বারবার বুঝিয়ে দিয়েছে। কাজেই রাজনৈতিক ‘কবর’ রচিত হওয়া বিএনপির আন্দোলনের হুমকিতে আওয়ামী লীগ একটুও ভীত নয়।’ একুশে পত্রিকার সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।

আওয়ামী লীগের পাঁতানো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না, এদেশে কোনো পাঁতানো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না- বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এই বক্তব্যের জবাবে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি নেতারা একেক সময় একক কথা বলছেন। একদিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা বলছেন, প্রস্তুতি নিচ্ছেন; অন্যদিকে আন্দোলনের হুঙ্কার ছাড়ছেন। কাজেই আমি বলতে চাই, বিএনপির হুমকিতে আওয়ামী লীগ একটুও ভীত নয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত ৯ বছরে বিএনপি প্রতিদিনই আন্দোলনের হুমকি দিয়ে আসছে। কখনো শীতের পর আন্দোলন, কখনো বর্ষার পর আন্দোলন, কখনো রমজান ঈদের পর আন্দোলন আবার কখনো ঈদুল আযহার পর। কিন্তু কার্যত আমরা দেখেছি আন্দোলনের নামে তারা কিছুই করতে পারেনি। মাঝখানে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ৬ মাস আগুনসন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশে ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল।’

কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ওই সময় বিএনপি অনির্দিষ্টকালের জন্য একটা অবরোধ দিয়েছিল, সেই অবরোধ আজ অবধি তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করেনি। রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা কত সর্বোচ্চ জায়গায় উপনীত হলে এরকম হতে পারে- সেটা বিএনপি বারবার বুঝিয়ে দিয়েছে। বিএনপির কেউ কেউ বলছেন, দেশে জনবিস্ফোরণ হবে। জনবিস্ফোরণ হলে সেটা জনতার উন্মাদনার মাধ্যমে হয়। মুখে বললে হয় না। আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের আগের সময়ে ফেরত যাই, দেখব বঙ্গবন্ধু যখন ৬ দফা দিলেন তখন পাকিস্তানি জান্তারা তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়, তার জন্য কবরও খোঁড়া হয়েছিল। কিন্তু সেদিন বাঙালি জনগণ তাদের সেই দূরভিসন্ধি বাস্তবায়ন হতে দেয়নি। নিজের জীবন দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বানিয়েছিল। এটাই হচ্ছে জনবিস্ফোরণ। বিএনপি ’৯৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি একটি পাঁতানো নির্বাচন করেছিল। এরপর তারা আন্দোলনের ঠেলায় পালানোর পথ না পেয়েই ২৮ দিনের মাথায় সংসদ বিলুপ্ত করে সংসদ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিল। এটাই হচ্ছে জনগণের আন্দোলন।

আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলেছিল। এখন সহায়ক সরকারের কথা বলছে। কিন্তু সহায়ক সরকারের রূপরেখা আজ অবধি তারা উপস্থাপন করতে পারেনি। তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার আরেকটি বড় উদাহরণ হলো-নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপের পরেরদিন আমরা দেখলাম, বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খুশিতে গদগদ। এর মাত্র দুদিন পরে তিনি বললেন, এই সংলাপ আইওয়াশ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং আমি মনে করি না এই দেউলিয়াপনা যে রাজনৈতিক দলের সেই তাদের আন্দোলনের হুমকিতে আওয়ামী লীগের ভীত হওয়ার কোনো কারণ আছে।’

‘আমরা একটা টার্গেট ঠিক করেছি। যেমন ধরুন- বঙ্গবন্ধু ৬ দফা, ১১ দফার পরে একদফায় চলে এসেছিলেন। জাতির সামনে একটি টার্গেট দিয়েছিলেন। ঠিক তেমনি ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধুকন্যা একটি টার্গেট দিয়েছিলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের দেশে পরিণত করবো। ইতিমধ্যে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কিন্তু আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছে গেছি। এখন আমরা বলছি, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করবো। সেই লক্ষ্যে আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে, প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আশা করি বাংলাদেশের মানুষকে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাবে।’ বলেন আওয়ামী লীগের মেধাবী এই নেতা।

-আপনার দলের সাধারণ সম্পাদক বিএনপির জনসমর্থনে উৎকণ্ঠিত। কয়েকদিন আগে তিনি কক্সবাজারে বলেছেন, বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হলেও জনসমর্থনে দুর্বল নয়। বিএনপির জনসমর্থন আছে সেকথা-তিনি প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন। আর আপনি বলছেন, বিএনপি বিপর্যস্ত, দেউলিয়াপনার চূড়ান্ত।’

একুশে পত্রিকা’র এমন প্রশ্নে দলের উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক নিখাদ সত্য কথাটিই বলেছেন। আমি দেউলিয়াপনা বলতে বিএনপির সাংগঠনিক বিপর্যস্ততার কথা বুঝিয়েছি। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি জনগণের সেন্টিমেন্ট যদি আপনি দেখেন, এদেশে অলমোস্ট ৩০ শতাংশ জনগণ যে কোনো অবস্থাতেই আওয়ামী লীগবিরোধী অবস্থানে থাকে। কাজেই এই শক্তিটাকে দুর্বল করে দেখার কোনো কারণ নেই। ওরা অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। তার মানে এই নয় যে আমরা তাদের দুর্বল ভাববো। আমরা চাই, বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তৈরি হোক। নির্বাচন আসলেই একেবারে নো চিন্তা, ডো ফূর্তি সেটা নয়। আমাদের দলের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক বার বার বলে আসছেন, যে সমস্ত নেতার জনভিত্তি ভালো, জনগণের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে, যাদের নেতিবাচক কোনো ইমেজ নেই তাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। এই কথাটি কেন বলছেন? কারণ আমরা মানুষের কাছে যেতে চাই। মানুষের কাছে যেনতেনভাবে গেলে আমাদের গ্রহণ করবে না। মানুষ চাইবে তাদের পছন্দের মানুষকে ভোট দিতে। মানুষের পছন্দের সেই মানুষটিকে অবশ্যই ইতিবাচক ভাবমূর্তির হতে হবে। এ কারণে কাদের ভাই যথার্থ বলেছেন। মানুষের সাইকোলোজিক্যাল একটা ব্যাপার আছে। আওয়ামী লীগ পরপর দুইবার কিন্তু ক্ষমতায় এসেছে। তৃতীয়বার মানুষ হয়তো মনে করতে পারে এবার একটা পরিবর্তন দরকার। বাংলাদেশের মানুষ হাজার ভালো হলেও দীর্ঘদিন এক জিনিস বার বার দেখতে অভ্যস্ত না। যেমন ধরুন, আপনি প্রতিদিন পোলাও খাবেন না। অথচ পোলাও-এর জন্য মানুষ অপেক্ষা করে। শরীর সুস্থ থাকলেও আপনি প্রতিদিন পোলাও খেতে চান না। এই বিষয়গুলোর কারণেই কাদের ভাই বোঝাতে চেয়েছেন আমরা যেন শত্রুপক্ষকে দুর্বল না ভাবি।’

-কিছুদিন আগে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে এক রাতেই আওয়ামী লীগের ৫ লাখ মারা যাবে। ক’দিন আগে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম চট্টগ্রামের একটি অনুষ্ঠানে বললেন, শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় ফিরতে না পারেন আমাদের কারোও অস্তিত্ব থাকবে না। আমিনুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এধরনের বক্তব্যের মধ্যদিয়ে তারা আসলে কী বোঝাতে চাইছেন? আওয়ামী লীগের অপরাধের মাত্রা এত বেশি যে, তারা খুব বেশি শংকিত?

আমিনুল ইসলাম বলেন, এটা অপরাধের বিষয় না। প্রথমত, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ৫ বছর শাসনামল যদি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেন আপনি দেখবেন ওই ৫ বছরে আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনৈতিক দলের জাতীয় কিংবা জেলা পর্যায়ের কোনো নেতাকে গ্রেফতার কিংবা রাজনৈতিক নিপীড়ন চালায়নি। পক্ষান্তরে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি তারেক জিয়ার নেতৃত্বে আইএসএ’র পরিকল্পনায় সারাদেশে সংখ্যালঘুদের হত্যা, ধর্ষণ, রাহাজানি এমনকি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পুকুরে জাল দিয়ে মাছ চুরি, ভিটায় গোচারণ থেকে শুরু করে ৬ মাসের মধ্যে আওয়ামী লীগের ২২ থেকে ২৪ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল। আপনাকে মাথায় রাখতে হবে বিএনপির মাস্টার মাইন্ড হচ্ছে আইএসআই। আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান ’৯১ সালে বিএনপিকে জয়যুক্ত করার জন্য ৫০ কোটি রুপি দিয়েছিল। ওরা শুরু থেকে আইএসআই ব্যাকড্। তাদের প্রাণের নেতা নিজামীর ফাঁসির পর পাকিস্তান সরকার বলেছিল, নিজামী পাকিস্তানের একজন অকৃত্রিম বন্ধু। সেই কুখ্যাত ঘাতকদের ফাঁসি হয় আওয়ামী লীগের আমলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। সে কারণে আমাদের নেতারা কর্মীদের সচেতন করার জন্য ওদের অতীতের ভয়াবহ দৃষ্টান্ত সামনে রেখে কথাগুলো বলছেন।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই নেতা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ’৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বেগম জিয়া সৌদি আরব গিয়েছিলেন। বেগম জিয়ার বড় সন্তান তারেক রহমান সন্তানের বাবা হয়েছিলেন। তার স্ত্রী সন্তান প্রসব করেছিলেন সিএমএইচ এ। তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাকে ফোন করে অভিনন্দিত করেছিলেন, ফুল এবং মিষ্টি পাঠিয়েছিলেন। বলেছিলেন তোমার মা নেই, মন খারাপ করো না। যে কোনো সময় দরকার পড়লে আমাকে ফোন দেবে। সেদিন একজন মায়ের ভূমিকায় শেখ হাসিনা অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এরপর আমরা দেখলাম ২০০১ সালের ১ অক্টোবর রাত থেকে শুরু হয়ে গেলো আওয়ামী লীগ দমন-অভিযান। আমরা এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। প্রতিটি যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হওয়ার পর পাকিস্তান বলে তারা তাদের পরীক্ষিত বন্ধু। তাদের পরীক্ষিত, ঘৃণ্য বন্ধুদের সমস্ত চাপ উপেক্ষা করে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে সরকার। তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা যদি ক্ষমতায় আসে ২০০১ সালের চেয়ে শতগুণ বেশি প্রতিহিংসা নিয়ে বীভৎসতা নিয়ে হাজির হতে পারে। এই জায়গাটিতে আমাদের নেতাকর্মীদের সতর্ক করার জন্য এধরনের বক্তব্য আসতেই পারে।