এম মোয়াজ্জেম হোসেন, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) : শীতের আগমনের সাথে সাথে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন শীতকালীন সবজি চাষে। ধান কাটার পর এখন তাদের সময় কাটছে সবজি খেতে। ভোরের আলো ফুটতেই শিশির ভেজা মেঠোপথ ধরে কৃষকরা ছুটে যাচ্ছেন তাদের সবজি ক্ষেতের দিকে।
শুধু কৃষকরাই নয়, শিশুরাও যোগ দিয়েছে এই কাজে। কাজীর বিলে সবজি চাষ করছেন লালানগর ইউনিয়নের মো. ফারুক জমাদার। তার সাথে কাজ করছে তার ১২-১৩ বছর বয়সী ছেলে পাভেল। মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে পাভেল। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাবাকে সাহায্য করতে সে এসেছে খেতে।
একই বিলে চাষ করছেন দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের মো. আবদুর রহিম এবং লালানগর ইউনিয়নের মো. খলিল। তারা দীর্ঘদিন ধরে শীতকালীন সবজি চাষ করে আসছেন। ইতিমধ্যে কিছু কিছু শাকসবজি বাজারে গেছে। ভালো দামও পাচ্ছেন তারা।
“সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেতে সময় দিচ্ছি,” বলেন আবদুর রহিম। খেতের ফসল ভালো হওয়ার জন্য তারা কৃষি পরামর্শ চান।
দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের আবিদ পাড়ার মো. হোসাইন বলেন, “সবজি চাষে সবাই এগিয়ে এলে একে অপরের উপর নির্ভর করতে হবে না এবং শাকসবজি ন্যায্যমূল্যে খেতে পারবে দেশের মানুষ।”
তিনি আরও বলেন, “নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর পরেও ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করলেও লাভ থাকবে। নিয়মানুসারে নিয়মিত খেতের পরিচর্যা করলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনাই নেই।”
উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের চৌধুরী বিলে চাষ করছেন বাদামতলী এলাকার মো. হাসান। তিনি জানান, সপ্তাহ খানেক আগে কৃষি অফিস থেকে ৮ প্যাকেট বীজ, ২০ কেজি সার ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ ১ হাজার টাকা প্রণোদনা পেয়েছেন।
“এখন ধান কাটা শেষ। এবার সবজি চাষে খেতের প্রস্তুতি ও পরিচর্যা শুরু করেছি,” বলেন হাসান। কৃষি কার্ড থাকায় তিনি উপকৃত হয়েছেন বলে জানান।
এদিকে বাজারেও উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি। কিছু কিছু শাক-সবজির দাম একটু কম হলেও বেশির ভাগ শাক-সবজির দাম খুব চড়া। তাই ভালো দাম পাওয়ার আশায় সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা।
অনেকেই শখের বসে এবং পারিবারের চাহিদা মেটাতে বাড়ির উঠান কিংবা অঙ্গিনায়ও শীতকালীন সবজি খেত করছেন। উদ্দেশ্য তাদের নিজ হাতে গড়া খেত থেকে টাটকা শাক-সবজি খেতে পারা।
বাড়ির উঠানে নিজ উদ্যোগে ছোট একটি সবজি খেত করেছেন উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও শিক্ষিকা রুমা আক্তার।
“পরিবার ও চাকরি নিয়ে ব্যস্ততায় সময় পার করতে হয়। তাও শখ করে বাড়ির উঠানে এই খেতটি করেছি,” বলেন রুমা আক্তার। “আমার প্রকৃতি ও সবুজের প্রতি ছোটবেলা থেকেই ভালো লাগা কাজ করতো। এই খেত হতে পারে তারই একটি অংশ। তাই ব্যস্ততার ভেতরও প্রথমবার বাড়ির উঠানে ছোট একটি সবজি খেত করেছি।”
শীতকালীন সবজি চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা দিচ্ছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি অফিস। কৃষকদের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে বাড়িতে সবজি বাগান করার জন্যও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, এবার তিন হাজার কৃষককে সবজি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। প্রণোদনার মধ্যে রয়েছে হাইব্রিড বীজ, সার ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ সহায়তা। প্রতিজন কৃষক এক বিঘা জমিতে সবজি চাষ করবেন। এছাড়াও, শুধুমাত্র বসতবাড়িতে চাষ করার জন্য ৭০০ জন কৃষককে বীজ দেওয়া হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়ায় প্রতি বছর আড়াই থেকে তিন হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। শীতকালে এই পরিমাণ আরও বেড়ে যায়।
“একজন কৃষক যদি এক টাকা বিনিয়োগ করে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করে তাহলে দেড় টাকা আয় করতে পারে। সবজি চাষে অবশ্যই লাভ আছে,” বলেন ইমরুল কায়েস।
তিনি আরও জানান, মাঠকর্মীরা কৃষকদের পাশে থেকে সবসময় কৃষি বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।