বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পারকির পর্যটন কমপ্লেক্সে অনিয়ম দেখে মুখ খুললেন না উপদেষ্টারা

প্রকাশিতঃ ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ৪:৫৫ অপরাহ্ন


জিন্নাত আয়ুব : পারকি সমুদ্র সৈকতে নির্মিত পর্যটন কমপ্লেক্স পরিদর্শনে এসে অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ কোনো মন্তব্য করেননি।

শনিবার সকাল ১০টার দিকে পর্যটন কমপ্লেক্সটি পরিদর্শন করেন তারা।

জানা যায়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ৬০ শতাংশ কাজও শেষ হয়নি। যা কাজ হয়েছে তাও নিম্নমানের। বিগত সরকারের আমলে এতো অনিয়ম দেখে উপদেষ্টারা অবাক হয়েছেন।

প্রকল্পের কাজের বিষয়ে পর্যটন করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী অসীম শীল বলেন, “বিগত সরকারের আমলে এই প্রকল্পে অনেক দুর্নীতি হয়েছে। বিগত সরকার পক্ষের লোকেরা মূল ঠিকাদার থেকে মেটেরিয়াল সাপ্লাই নিয়ে নেয়। এই প্রকল্পের কাজের প্রায় মেটেরিয়াল নিম্নমানের, তাই হয়তো উপদেষ্টা মহোদয়গণ একটু অসন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন।”

আনোয়ারার ইউএনও তাহমিনা আক্তার বলেন, “আমার সাথে উপদেষ্টা মহোদয়ের অফিসিয়াল কোনো কথা হয়নি। উপজেলা প্রশাসন প্রোটোকলে ছিল। পর্যটন কমপ্লেক্স ছাড়াও তারা আনোয়ারার শিল্পাঞ্চল সিউএফএল, কাফকো ও কেইপিজেড পরিদর্শন করেন।”

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পারকি সমুদ্র সৈকতে পর্যটন করপোরেশনের উদ্যোগে ১৩ দশমিক ৩৬ একর জমিতে ৭৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বিশ্বমানের পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

২০১৮ সালের নভেম্বরে শুরু হয়েছিল এ প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৬২ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল দুই বছর। ২০২০ সালের নভেম্বরে মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দ্বিতীয় দফায় এর মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে আরও এক বছরের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

বর্তমানে এ প্রকল্পের ৬০ শতাংশ কাজ হলেও কাজের মান নিম্নমানের।

প্রকল্পের মধ্যে মোট ১৭টি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ১৪টি আধুনিক কটেজ রয়েছে। এর মধ্যে চারটি ডবল ডুপ্লেক্স কটেজ ও ১০টি সিঙ্গেল কটেজ। চতুর্থ তলাবিশিষ্ট একটি মাল্টিপারপাস ভবন। এর গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকবে পর্যটন অফিস, দ্বিতীয় তলায় থাকবে দুটি দোকান, একটি রেস্টুরেন্ট, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় থাকবে দুটি বার, একটি ২৫০ আসনের কনভেনশন হল।

তৃতীয় তলাবিশিষ্ট একটি সার্ভিস ব্লক, যেখানে ছাত্রছাত্রীদের থাকার বিশেষ ব্যবস্থাসহ পর্যটকদের জন্য সিঙ্গেল ব্যাচেলর সার্ভিস রুম ৩৫টি, কমপ্লেক্স সার্ভিস স্টাফদের জন্য ৪৪টি রুম রয়েছে। একটি ওয়াশরুম ব্লক, যেখানে নারী-পুরুষদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া একটি লেক, একটি ঝুলন্ত ব্রিজ, দুটি পিকনিক শেড, কুকিং শেড। একটি খেলার মাঠ, যার মধ্যে ভলিবল, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যবস্থা থাকবে এবং গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধাও রাখার পরিকল্পনা ছিল।

এসব বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দেশ লিংক ও গ্রামবাংলার স্বত্বাধিকারী মাসুদ আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পরে দেশ লিংক ও গ্রামবাংলার প্রকৌশলী মো. বাবুল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “কেন এতো অনিয়ম হয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সচিব মাহমুদ কবীরের সাথে কথা বলে জেনে নিন।”

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) (পরিকল্পনা) মো. মাহমুদ কবীর বলেন, “আপনাকে অনিয়মের কথা কে বলেছে?” দেশ লিংক ও গ্রামবাংলার প্রকৌশলী মো. বাবুল আহমেদের কথা বললে তিনি বলেন, “ঠিক আছে, আমি উনার সাথে কথা বলছি। বিষয়টি আমরা দেখব।”