মাইজভাণ্ডারীর ওরশে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা


লাখো ভক্তের উপস্থিতিতে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে মাইজভাণ্ডারী তরিকার প্রবর্তক হযরত গাউছুল আজম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (ক.) এর ১১৯তম বার্ষিক ওরস।

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন হযরত মওলানা শাহছুফী সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভাণ্ডারী।

মোনাজাতে দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন তিনি।

এই ওরসে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাইজভাণ্ডারে আসেন আশেক-ভক্তরা।
এছাড়াও ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, চায়না, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ওমানসহ নানা দেশ থেকে অসংখ্য ভক্ত-অনুরক্ত মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফে আসেন।

সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভাণ্ডারী বলেন, “মহান আল্লাহর অলিগণের কারণে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসার লাভ করেছে। ইসলামের ক্রান্তিলগ্নে সবসময় সুফিসাধকরাই ধর্মের আধ্যাত্মিক ও শরীয়তের অবকাঠামোর রক্ষকের ভূমিকায় অবর্তীর্ণ হয়েছেন। ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারের পাশাপাশি ইসলামের মৌলিক আদর্শ ও বিশ্বাসের সাথে সমাজ সংস্কৃতির নৈতিক সংস্কারে আধ্যাত্মিক পূর্ণতা লাভের কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন।”

তিনি আরও বলেন, “গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারী শাহসুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.) মাইজভাণ্ডারী তরিকা প্রবর্তন করেছেন। মাইজভাণ্ডারী তরিকা ইসলামের মৌলিক আদর্শ ও আঞ্চলিক সংস্কৃতির মেলবন্ধনের চূড়ান্ত আধ্যাত্মিক রূপ। এ তরিকার অনুসারীরা ঐশি প্রেমনির্ভর শিক্ষা ও ইসলামী শরীয়তভিত্তিক চর্চায় কার্যকর ভূমিকা রাখছে।”

নায়েব সাজ্জাদানশীন সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভাণ্ডারী বলেন, “সুফি দর্শন মানবতার শিক্ষায় আলোকিত পথ দেখায়। মাইজভাণ্ডারী তরিকার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের আত্মিক উন্নতি, নৈতিক মানোন্নয়ন, এবং সামাজিক শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা। আমরা ওরশের মাধ্যমে শুধুমাত্র স্মরণ করি না, বরং সমাজে মানবিক মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নিজেদের উৎসর্গ করার প্রতিজ্ঞা করি।”

এই ওরস উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।

এর মধ্যে ছিল ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান; জাতীয় হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা; আন্তর্জাতিক দায়রা শাখাসমূহের পুনর্মিলনী উপলক্ষে মাইজভাণ্ডারী সুফি খালওয়াত অনুষ্ঠান; দারুল ইরফান শিক্ষা পরিবার সমাবেশ; রক্তদান কর্মসূচি ও থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা সেমিনার; এথিকস অলিম্পিয়াড ও তাকদিস সংলাপ; মেধাবিকাশ শিক্ষা উৎসব, বিজ্ঞান বক্তৃতা এবং বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড; খলিফায়ে গাউছুল আজম ও অন্যান্য দরবারের আওলাদগণের উপস্থিতিতে তাসাউফ সংলাপ; ক্লীন এন্ড গ্রীন কর্মসূচী এবং আন্তর্জাতিক ছবি প্রদর্শনী; মাইক্রো, সিএনজি ও সেলাই মেশিন বিতরণ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ড্রাইভারদের মাঝে সনদ বিতরণ এবং প্রেমের তরী পুনর্মিলনী ও সম্মাননা প্রদান; সুফি নাটক ‘পাখিদের বিধান সভা’ প্রদর্শনী, প্রকাশনা উৎসব এবং স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ; এথিকস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম ও মেধা বিকাশ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণকারী নেচার ক্লাব সদস্যদের মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ পরিদর্শন; হযরত গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারীর (ক.) এর মাজার শরীফে গিলাফ চড়ানো, মিলাদ, তাওয়াল্লোদে গাউছিয়া, জিকির ও মোনাজাত এবং জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা সমূহে ক্রোড়পত্র প্রকাশ, মিলাদ, তাওয়াল্লোদে গাউছিয়া, জিকির ও আখেরী মোনাজাত।

এছাড়াও প্রতিদিন বাদে মাগরিব থেকে অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র খতমে কোরআন শরীফ, হযরত গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারী (ক.) এর জীবন, কর্ম শিক্ষা ও তাসাউফ ভিত্তিক আলোচনা ও মাইজভাণ্ডারী ছেমা মাহফিল।

ওরশ উদযাপন উপলক্ষে ভক্তদের নিরাপত্তা বিধান এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ ছাড়াও সাদা পোশাকে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।

সুষ্ঠুভাবে ওরশ সমাপ্ত করতে সহযোগিতা করায় ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভাণ্ডারী।