দেশে প্রতি লাখে ১০৬ জন ক্যান্সার আক্রান্ত, মৃত্যুর ১২ শতাংশের কারণ এই মরণব্যাধি


গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ১০৬ জন ক্যান্সার আক্রান্ত। বছরে নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতি লাখে ৫৩ জন এবং মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশের জন্য দায়ী এই মরণব্যাধি।

শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে “বাংলাদেশে ক্যান্সারের বোঝা: জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি” শীর্ষক এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।

গবেষণায় বলা হয়, দেশে ৩৮ ধরনের ক্যান্সারে মানুষ আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালী ও জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

প্রধান গবেষক ও বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোঃ খালেকুজ্জামান বলেন, “২০২৩ সালের জুলাই থেকে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় এই গবেষণাটি পরিচালিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৬৩১টি পরিবারের দুই লক্ষাধিক মানুষকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৪৮.৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৫১.৬ শতাংশ নারী।”

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মোট ২১৪ জন ক্যান্সার রোগী পাওয়া গেছে। ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বিবেচনায় প্রতি লাখে আক্রান্তের সংখ্যা ১০৬ জন (পুরুষের ক্ষেত্রে ১১৮ জন এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৯৬ জন)।

ক্যান্সার রোগীদের ৯২.৫ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৭৫ বছরের মধ্যে। ১৮ বছরের কম বয়সী ক্যান্সার রোগী আছেন ২.৪ শতাংশ এবং ৭৫ বছরের বেশি বয়সী ক্যান্সার রোগী আছেন ৫.১ শতাংশ।

গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে ১৬.৮ শতাংশই স্তন ক্যান্সার রোগী। ঠোঁট ও মুখগহ্বর ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৮.৪ শতাংশ, পাকস্থলী ও স্বরযন্ত্র ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৭ শতাংশ করে এবং জরায়ুমুখ ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৫.১ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ফুসফুস, শ্বাসনালী ও পাকস্থলীর ক্যান্সারে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে।

ডা. খালেকুজ্জামান বলেন, “বিশ্বে ক্যান্সার মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি (পিবিসিআর) না থাকায় প্রতিবেশী দেশগুলোর তথ্য ব্যবহার করে ক্যান্সারের পরিস্থিতি অনুমান করতে হয়। ফলে বাংলাদেশে ক্যান্সারের সঠিক পরিস্থিতি জানার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্যান্সারের পরিস্থিতি নির্ণয় করা জরুরি হয়ে পড়েছিল, যার জন্যই এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়।”

অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “গণআকাঙ্ক্ষা পূরণ করে এমন গবেষণার জন্য অর্থের কোনো সমস্যা হবে না। বিএসএমএমইউর উদ্যোগে পরিচালিত বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি থেকে যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে তা দেশের মানুষের ক্যান্সার প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় বিরাট ভূমিকা রাখবে। একই সাথে এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশে ক্যান্সার নিয়ে গবেষণার বহুমুখী দ্বার উন্মোচন করেছে।”

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহর বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, “নিত্যনতুন জ্ঞান তৈরিতে গবেষণার বিকল্প নেই। বিএসএমএমইউ থেকে সেই গবেষণায় পরিচালনা করা উচিত যা রোগীদের কল্যাণে কাজে আসে। যেসব গবেষণা দেশের মানুষের, দেশের রোগীদের উপকার হবে, সেক্ষেত্রে সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা এবং বিএসএমএমইউ এই গবেষণায় অর্থায়ন করেছে।

অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ রোবেদ আমিন উপস্থিত ছিলেন।