- সত্যব্রত বড়ুয়া
সত্যব্রত বড়ুয়া। একজন সুসাহিত্যিক ও সাংবাদিক ছিলেন তিনি। অসংখ্য বইয়ের লেখক ছিলেন। চট্টগ্রামের আদি ও ঐতিহ্যবাহী দৈনিক ‘আজাদী’তে দীর্ঘকাল কাজ করেছেন। গত ৮ এপ্রিল তিনি ইহলোক ত্যাগ করেছেন। তাঁর চলে যাওয়ার দুঃসংবাদটি পাই চট্টগ্রামে আমার আরেক স্নেহভাজন ও শুভার্থী বিতান বড়ুয়ার কাছ থেকে। রম্যলেখক হিসেবে চট্টগ্রামে তাঁর বিপুল খ্যাতি ছিল। তিনি অশীতিপর হয়েছিলেন। একজন অসাধারণ মানের পাঠক, পুস্তক সমালোচক এবং অনুসন্ধিৎসু মানুষ ছিলেন। চট্টগ্রামে আমার দু’দফায় চাকরির জন্য নয়, বরং কিঞ্চিৎ লেখালেখির অভ্যাসের কারণেই তাঁর সাথে আমার নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ছিল।
আমি ঠিক জানি না আমরা কে কার অনুরাগী ছিলাম? মনে পড়ছে, মৃত্যুর ৪/৫ দিন পূর্বেও তিনি আমার খোঁজ নিয়েছেন। বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়েছিল। দুয়েকবার তাঁর কল রিসিভ করতে না পেরে সোজা দুঃখ প্রকাশ করেছিলাম। আলাপের বিষয়, আমার লেখাজোখা ও প্রকাশিত নতুন বইয়ের সন্ধান। কারা করেছে, কোথায় পাওয়া যাবে, কিভাবে পাওয়া যাবে- ইত্যাদি ইত্যাদি।
সর্বশেষ কথোপকথনেও আমি তাঁকে দৃঢ়ভাবে বলেছিলাম, না, আপনার কণ্ঠস্বর বলছে আপনি সিরিয়াস কোনো অসুস্থ নন।
তিনি খুশি হয়েছিলেন, যেমন সবাই হন। কথায় কথায় তিনি সেদিন দোয়াও চেয়েছিলেন।
দুই.
মাত্র কয়েকমাস আগের কথা। ঢাকায় কর্মরত তাঁর সহোদর অনুজকে আমার কাছে পাঠিয়ে ঢাকা ক্লাবের গেইট থেকে আমারই দু-তিনটা বই নিয়ে যান। বই পেয়ে বেচারার কী যে আনন্দ! সঙ্গে সঙ্গেই সকৃতজ্ঞ প্রাপ্তিস্বীকার করেছিলেন।
আমি বলতাম, দাদা, আপনি তো হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন না। আমার লেখার লিংকগুলো ফরওয়ার্ড করতে পারছি না। সেদিন কিছুটা সংকোচ ও লজ্জিত বোধ করে বলেছিলেন, এবার আমার ছেলের নম্বরটি দিয়ে দিব। আপনি পাঠিয়ে দিবেন। আমাকে প্রায়ই বলতেন, লেখাটা আপনি ছাড়বেন না। একদিন এটা আপনাকে আরও উপরে নিবে।
তিন.
চট্টগ্রামের সঙ্গে আমার নিরন্তর যোগাযোগটা বোধকরি ক্রমেই হ্রস্ব হয়ে আসছে। একুশে পত্রিকা’র সাংবাদিক আজাদ তালুকদারের অকাল প্রয়াণের পর কিছুদিন থমকে গিয়েছিলাম। এবার প্রবীণ লেখক সত্যব্রত বাবু।
চার.
মানুষের বেঁচে থাকাটা কী অদ্ভুত! কী বিচিত্র! এই আছি, এই নাই। অথচ ফোনের রেকর্ডের মিছিলে নাম-ধাম সবই থেকে যাচ্ছে। শুধু হঠাৎ করে শোনা যাবে না- ‘আপনি কেমন আছেন? সন্তানরা কে কোথায়, কী করছে তারা? চট্টগ্রামে আসা হয় না’?
লেখক: গল্পকার ও কলামিস্ট।

