মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে, তবে ‘পাল্টা শুল্ক’ ভাবাচ্ছে মালিকদের


একক বাজার হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটেক্সা) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই তিন মাসে বাংলাদেশ থেকে ২২২ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পোশাক আমদানি করেছে দেশটি, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি।

ওটেক্সার ৬ মে প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ২ হাজার ৪ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি। এই সময়ে পোশাক আমদানির শীর্ষ উৎস চীনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ (আমদানি ৩৫৯ কোটি ৬১ লাখ ডলার) এবং ভিয়েতনাম থেকে আমদানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ (আমদানি ১ হাজার ৩১৭ কোটি ডলার)। অন্যান্য প্রধান সরবরাহকারী দেশ যেমন ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মেক্সিকো, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও কোরিয়া থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি বেড়েছে। শীর্ষ ১০ উৎসের মধ্যে বাংলাদেশ থেকেই আমদানি প্রবৃদ্ধির হার সর্বাধিক।

তবে এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা। তারা বলছেন, গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন দেশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হারে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, যা পরে ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হলেও প্রতিটি দেশের ওপর ১০ শতাংশ হারে একটি পাল্টা শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে। বিদ্যমান ১৫ শতাংশ গড় শুল্কের সঙ্গে এই অতিরিক্ত ১০ শতাংশের বোঝা এককভাবে ক্রেতারা নিতে চাইছেন না। শুল্কের একটি অংশ, ক্ষেত্রবিশেষে পুরোটাই, রপ্তানিকারকদের ওপর চাপানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল এ প্রসঙ্গে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির মোট প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের মতো, সেখানে বাংলাদেশ থেকে আমদানি প্রবৃদ্ধি ২৬ শতাংশের বেশি, যা খুবই ইতিবাচক। পণ্যের দাম ও পরিমাণের দিক থেকেও আমরা ভালো অবস্থানে আছি। তবে নতুন ট্যারিফের প্রভাব এই ধারায় পড়বে কিনা, তা বুঝতে আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে।”

তিনি আরও জানান, ইউনিটপ্রতি পণ্যের দামে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১ দশমিক ১২ শতাংশ, ভিয়েতনামের ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং চীনের ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যেখানে ভারত ও পাকিস্তানের দাম যথাক্রমে ২ দশমিক ৪৬ ও ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ কমেছে।

দেশের অন্যতম বৃহৎ পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের মুনাফা করার সক্ষমতা কমবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় উৎপাদন দক্ষতার উন্নয়ন ঘটাতে হবে, যার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ জরুরি।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বাজারে ইতোমধ্যে শুল্ক আরোপের প্রভাবে ক্রেতাদের মধ্যে রক্ষণশীল মনোভাব দেখা যাচ্ছে এবং পণ্য বিক্রি কমেছে, যা বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য পণ্যের দামে আরও চাপ সৃষ্টি করবে। তবে বছর শেষে পণ্যের মোট পরিমাণ আগের মতোই থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।