চট্টগ্রামে ফুফু হত্যা: পরকীয়ার জেরে দেবর-ভাবির যাবজ্জীবন


চট্টগ্রামে পরকীয়ার জেরে ফুফু নুর আয়েশাকে হত্যার দায়ে তার আপন ভাতিজা ও ছেলের বউকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। হত্যাকাণ্ডের প্রায় দশ বছর পর মঙ্গলবার চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রোজিনা খান এ রায় দেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, রাউজান উপজেলার উনসত্তর পাড়া গ্রামের কাজী বাড়ির মোহাম্মদ হানিফের ছেলে শেখ কামাল (৩৪) এবং একই উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের শহিদুল্লাহ কাজীর বাড়ির নুর আয়েশার ছেলে প্রবাসী মুবিনের স্ত্রী কুসুম আকতার (৩৩)। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মোকাররম হোসেন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আদালত সূত্র জানায়, মামলার আসামি শেখ কামাল শুরু থেকেই পলাতক। অন্যদিকে, কুসুম আকতার মামলার প্রাথমিক পর্যায়ে আদালতে হাজির থাকলেও রায় ঘোষণার দিন অনুপস্থিত ছিলেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, নুর আয়েশার ছেলে মুবিন প্রবাসে থাকার সুবাদে ভাতিজা শেখ কামাল তার ফুফুর বাড়ির দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন। এই সুযোগে কামাল তার প্রবাসী ভাইয়ের স্ত্রী কুসুম আকতারের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাতে নুর আয়েশা তার পুত্রবধূ কুসুম ও ভাতিজা কামালকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন। বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে কামাল ও কুসুম মিলে নুর আয়েশাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।

ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নুর আয়েশার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করা হয় এবং ২৩ সেপ্টেম্বর তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে কুসুম আকতার তার প্রবাসী স্বামী মুবিনের কাছে হত্যার ঘটনা স্বীকার করলে মুবিন দেশে ফিরে গ্রাম্য সালিশি বৈঠকের আয়োজন করেন। সেই বৈঠকে কুসুম সবার সামনে খুনের দায় স্বীকার করেন।

এর জেরে ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর মুবিন বাদী হয়ে শেখ কামাল ও এক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে রাউজান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরদিন ২৩ অক্টোবর কুসুম আকতার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে কবর থেকে নুর আয়েশার মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হয়।

দীর্ঘ তদন্ত ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন।