মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ স্থাপন বা বন্দর হস্তান্তরের মতো কোনো উদ্যোগ জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষা করে গ্রহণ করা হলে তা চলবে না বলে আপত্তি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এসব বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দলটির আমীর আল্লামা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ্ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিকট সাতটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। আজ শুক্রবার (১৬ মে) এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এসব কথা জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ স্থাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের অংশগ্রহণে প্রস্তাবিত শর্তসাপেক্ষ কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তির খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু বিদেশি শক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত এই উদ্যোগ কেবল মানবিক সহায়তার মোড়কে উপস্থাপিত হলেও, এর অন্তর্নিহিত লক্ষ্য অনেক বেশি জটিল এবং আশঙ্কাজনক। এই উদ্যোগে সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন, যেমন— আরাকান আর্মি এবং অন্যান্য দল উপকৃত হবে বলে তারা মনে করেন, যারা বিগত বছরগুলোতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সহিংসতা চালিয়ে এসেছে। এই পরিস্থিতি শুধু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নয়, বাংলাদেশের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুতর হুমকি তৈরি করছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
নেতৃদ্বয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিকট যে সাতটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— প্রস্তাবিত করিডোর ও এর কার্যক্রম বিষয়ে তিনি কোনো আন্তর্জাতিক অংশীদার বা সংস্থার সঙ্গে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন কিনা, তিনি এমন কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেন কিনা যাতে এ করিডোর আরাকান আর্মি বা তাদের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পক্ষে ব্যবহৃত হবে না এবং রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মুসলমানদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে না। এই উদ্যোগটি বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের ইসলামি, মানবিক ও ন্যায্য অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও স্বাধীনতায় জীবনযাপন সম্পর্কে তিনি কী নিশ্চয়তা দিতে পারেন— এমন প্রশ্নও রাখা হয়েছে।
এছাড়াও, আশ্রয় নেওয়া প্রতিটি রোহিঙ্গা নাগরিক নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারবে কিনা তার নির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে বলা হয়েছে ড. ইউনূসকে। এই করিডোর প্রকল্পের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের ভেতরে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর মনোবল বাড়তে পারে এমন উদ্বেগ জানিয়ে, এতে দেশের অখণ্ডতা ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে না কিনা তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সবশেষে, এই করিডোর কোনো বিদেশি শক্তি বা গোষ্ঠীর দ্বারা বাংলাদেশে ভবিষ্যতে কোনো অস্থিতিশীলতা, সংঘাত বা যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টির পথ প্রশস্ত করবে না তার নিশ্চয়তা চাওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে— জাতীয় পরামর্শ, রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সংসদীয় আলোচনাবিহীন কোনো সিদ্ধান্ত— বিশেষত যা দেশের নিরাপত্তা, ধর্মীয় সম্প্রীতি ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে হুমকির মুখে ফেলে, তারা তা কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না। তারা ড. ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানান, তিনি যেন তার ভূমিকা ও অবস্থান জাতির সামনে স্বচ্ছভাবে উপস্থাপন করে বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য উদ্বেগগুলোর যথাযথ জবাব দেন।