গাজায় বড় সামরিক অভিযান শুরু করলো ইসরাইল


গাজায় হামাসকে পরাজিত করা এবং সেখানে থাকা ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্ত করতে বড় ধরনের একটি সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বা আইডিএফ তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) একাউন্টে এক পোস্টে জানিয়েছে, তারা এই অভিযান শুরু করছে। ইসরাইলি গণমাধ্যম এটিকে ‘অপারেশন গিডিয়ন্স চ্যারিওটস’ নামে অভিহিত করেছে।

আইডিএফের ইংরেজি ভাষার একাউন্ট থেকে দেওয়া পোস্টে বলা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত হামাস হুমকি না হয়ে ওঠে এবং তাদের কাছে থাকা সব জিম্মি মুক্ত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এই অভিযান বন্ধ হবে না। এই পোস্টে আরও দাবি করা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকায় ১৫০টিরও বেশি ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে’ হামলা চালানো হয়েছে।

অন্যদিকে গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে ইসরাইলি হামলায় প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছেন। গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় গাজায় ৫৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছে।

দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে গত মার্চ মাস থেকে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইসরাইল। শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, গাজায় অনেক মানুষ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। সোমবার জাতিসংঘের এক রিপোর্টেও বলা হয়েছে, গাজার জনগোষ্ঠী বর্তমানে ‘চরম দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে’ রয়েছে। যদিও ইসরাইলি সরকার বারবার দাবি করে আসছে, গাজায় কোনো খাদ্য সংকট নেই।

ইসরাইলি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল বলেছে, ‘অপারেশন গিডিয়ন্স চ্যারিওটস’ অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে, গাজার দক্ষিণে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া, ত্রাণ কার্যক্রমের ওপর হামাসের নিয়ন্ত্রণ ঠেকানো এবং হামাসকে প্রতিহত করা।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার র্টুক বলেছেন, ইসরাইলের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল হতে পারে। তিনি বলেন, এই সর্বশেষ বোমাবর্ষণ, বাসিন্দাদের জোরপূর্বক স্থানান্তর, বিভিন্ন এলাকাগুলোকে পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করা এবং মানবিক সহায়তা না ঢুকতে দেওয়া—সবকিছু মিলে মনে হচ্ছে গাজায় একটি স্থায়ী জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে, যা আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী এবং জাতিগত নিধনের সমতুল্য।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চলতি মাসের শুরুতে বলেছিলেন, ইসরাইল গাজায় তীব্র আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার উদ্দেশ্য ওই এলাকা তাদের দখলে রাখা। ইসরাইলি সরকার এটিও বলেছিল যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই অভিযান শুরু হবে না। শুক্রবারই ট্রাম্প সফর শেষে মধ্যপ্রাচ্য ত্যাগ করেন।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়, যাদের মধ্যে এখনো ৫৭ জন জিম্মি হামাসের কাছে রয়েছে। এরপরই ইসরাইল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ইসরাইল সীমান্তে সাঁজোয়া বাহিনীও মোতায়েন করেছে। গাজায় পুনরায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু করতে এবং অবরোধ প্রত্যাহারে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ার পরও ইসরাইল হামলা আরো বাড়িয়েছে, যার পরেই এই অভিযান শুরু হওয়া মানে এতদিনের সকল কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।