এস আলমের ‘শান্তি’ কেড়েছে সরকার: আইনজীবী পুষতেই বছরে ৩ কোটি ডলার ব্যয়!


যারা লুটপাট ও দুর্নীতির মাধ্যমে জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছেন, তাদের দিন আর শান্তিতে কাটছে না – এমনটাই ইঙ্গিত দিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের কর্ণধারের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “আমরা শুনেছি, এস আলম তাঁর আইনজীবীর পেছনে বছরে তিন কোটি ডলার ব্যয় করবেন। এটা তাঁর শান্তিতে থাকার লক্ষণ নয়। আমরা তাঁদের ঘুম নষ্ট করতে পেরেছি।”

আজ (সোমবার) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর এই মন্তব্য করেন। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার অগ্রগতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, লুটপাটের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা এবং বর্তমানে সংযুক্ত ও অবরুদ্ধ থাকা বিপুল পরিমাণ টাকা এবং শেয়ার ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার একটি আলাদা তহবিল গঠন করছে। এই তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে অর্থায়ন করা হবে, যা তারা পরবর্তীতে প্রতারিত আমানতকারীদের ফেরত দিতে পারবে। পাশাপাশি, ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে থেকে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দরিদ্র জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা হবে।

কিভাবে এই তহবিল কাজ করবে তার উদাহরণ দিতে গিয়ে গভর্নর এস আলম গ্রুপের প্রসঙ্গ টানেন। তিনি বলেন, “ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে এস আলম গ্রুপের ১২ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার জব্দ করা হয়েছে। এই শেয়ার একটি কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যাংক (ইসলামী ব্যাংক) পাবে, যা আমানতকারীদের ফেরত দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, সরকার প্রথমবারের মতো এ ধরনের একটি তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং জব্দ করা অর্থ ও সম্পদ ইতিমধ্যেই সরকারের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করে দ্রুত এই তহবিলের কার্যক্রম শুরু করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের বড় ১০টি ব্যবসায়ী গ্রুপ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা অর্থ পাচারের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্সের ১১টি বিশেষ টিম। এই ১০ শিল্পগোষ্ঠীর মধ্যে এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ ও আরামিট গ্রুপ অন্যতম।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “তাঁরা (অর্থ পাচারকারীরা) যে শান্তিতে নেই, তার আরও একটি প্রতিচ্ছবি হলো, মাঝারি আকারের আরও ১২৫টি অনিয়ম তদন্তের আওতায় আসছে, যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে ২০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ লুট করা হয়েছে। আমরা ২০টি বিদেশি আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছি এবং তাদের কার্যপরিধি ঠিক করা হচ্ছে।”

শফিকুল আলম আরও জানান, যারা তদন্তের আওতায় এসেছেন, তাদের ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ সংযুক্ত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বিদেশে থাকা ১৬ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার এবং দেশের অভ্যন্তরে ৪২ হাজার ৬১৪ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “যারা দেশ থেকে অর্থ পাচার করেছেন, তাঁরা শান্তিতে থাকতে পারবেন না।” তিনি স্বীকার করেন, টাকা ফেরত আনতে সময় লাগবে কারণ এটি একটি জটিল আইনি প্রক্রিয়া, তবে সরকার এই বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।