
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সংঘাত ও সহিংসতার কারণে গত দেড় বছরে দেড় লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
সংস্থাটি বলছে, ২০১৭ সালের ঢলের পর এটিই একবারে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ঘটনা।
অনুসন্ধানে অভিযোগ উঠেছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি মাথাপিছু ৩৫ হাজার টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের সীমান্ত পার হতে সহায়তা করছে এবং তরুণদের জোর করে যুদ্ধে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।
গত মার্চে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শরণার্থীদের পরের ঈদ নিজ দেশে উদযাপনের আশা প্রকাশ করলেও নতুন এই অনুপ্রবেশ সংকটকে আরও গভীর করেছে।
সম্প্রতি রাখাইন থেকে পালিয়ে টেকনাফে আসা নুরজাহান (৪৫) নামের এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, “রাখাইনে আরাকান আর্মি (মগরা) খুব নির্যাতন করছে। তারা বলছে, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও ভারতের সীমান্ত খোলা, যার যেখানে ইচ্ছা চলে যাও। এখানে থাকতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “সীমান্ত পার করে দেওয়ার বিনিময়ে প্রতিজনের কাছ থেকে তারা ১২ লাখ কিয়েট (বাংলাদেশি ৩৫ হাজার টাকা) নিচ্ছে। তবে তারা আমাদের আসতে সুযোগ দিলেও তরুণদের জোর করে রেখে দিচ্ছে যুদ্ধে পাঠানোর জন্য।”
আরাকান আর্মির কাছ থেকে পালিয়ে আসা আরেক তরুণ মো. সেলিম জানান, তাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছিল। পরে আবার ধরে নিয়ে গিয়ে ১৭ দিন আটকে রেখে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
“তাদের সঙ্গে যুদ্ধে যেতে না চাইলে নির্যাতন করত। একদিন সুযোগ বুঝে পালিয়ে আসি,” বলেন তিনি।
নতুন অনুপ্রবেশের বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও মিয়ানমারে বাংলাদেশ মিশনের সাবেক প্রধান মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) এমদাদুল ইসলাম বলেন, “রোহিঙ্গাদের আরাকান আর্মিই সীমানা পার করে দিচ্ছে, এটা রাখাইনের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। এপারে ক্যাম্পে যারা আছেন, তাদের মধ্যে এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে।”
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “তারা নিজ দেশ থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে, তাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে। তবে সব রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
৩৪ বছর ধরে টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পে থাকা নুর মোহাম্মদ (৭৯) বলেন, “আর কত বছর এ দেশে থাকতে হবে জানা নেই। মৃত্যুর দুয়ারে এসে পৌঁছেছি। হয়তো এপারেই মৃত্যু হবে। অন্তত নতুন প্রজন্ম যাতে আমাদের দেশে ফিরে যেতে পারে, সেই আশায় আছি।”
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, “প্রায় আট বছরে একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফেরত যায়নি, উল্টো অনুপ্রবেশ থামেনি। এতে স্থানীয়দের মধ্যে হতাশা ও নিরাপত্তা হুমকি বাড়ছে।”
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, “সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আমরা বহু অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিহত করেছি। তবে বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সীমান্তে আমাদের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।”
