শিক্ষক মিলছে না: ১ লাখ পদের বিপরীতে আবেদন মাত্র ৫৮ হাজার


বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের তীব্র সংকট কাটাতে ১ লাখের বেশি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েও কাঙ্ক্ষিত সাড়া পায়নি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। ১ লাখ ৮২২টি পদের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে মাত্র ৫৮ হাজার ৭০০টি। ফলে আবেদনকারী সবাই যোগ্য হলেও প্রায় ৪১ হাজার ৩০০ শিক্ষকের পদ শূন্যই থেকে যাচ্ছে, যা দেশব্যাপী এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান সংকটকে আরও গভীর করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আবেদনে এই স্বল্পতার জন্য মূলত বয়স ও সনদের মেয়াদ সংক্রান্ত কিছু কঠোর শর্তকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই অচলাবস্থার কারণে দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

সংকটের গভীরতা

এনটিআরসিএ গত ১৬ জুলাই ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারাদেশের এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৮২২টি শূন্য পদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন আহ্বান করে। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ৪৬ হাজার ২১১টি, মাদ্রাসায় ৫৩ হাজার ৫০১টি এবং কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ১১০টি পদ রয়েছে।

দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী যেহেতু এসব এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে, তাই এই বিপুল সংখ্যক পদ শূন্য থাকাটা পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার জন্যই এক অশনি সংকেত। এনটিআরসিএ-এর কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন, আবেদনের সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চাহিদা দিয়েও শিক্ষক পাবে না, যা তাদের শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে পারে।

আবেদনে ভাটা: ‘শর্তের বেড়াজালে’ প্রার্থীরা

ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়, যা বহু নিবন্ধনধারী প্রার্থীকে আবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন চাকরিপ্রার্থী গোষ্ঠী আন্দোলনেও নেমেছে, যা এখনও চলমান।

বিজ্ঞপ্তির শর্তানুযায়ী, প্রার্থীর বয়সসীমা ৪ জুন ২০২৫ তারিখে সর্বোচ্চ ৩৫ বছর হতে হবে—যেদিন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়েছিল। এর পাশাপাশি, নিবন্ধন সনদের মেয়াদ ফল প্রকাশের তারিখ থেকে তিন বছরের মধ্যে থাকতে হবে। এই দুটি শর্ত পূরণ না হওয়ায় বিপুল সংখ্যক প্রার্থী আবেদন করতে পারেননি, যা আবেদনকারী কম হওয়ার প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক সংকট কাটাতে বিশেষ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এক থেকে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন মহল।

বঞ্চিতদের দাবি ও এনটিআরসিএ’র বক্তব্য

একদিকে যখন সংকট কাটাতে পুরোনো নিবন্ধনধারীদের নিয়োগের দাবি উঠছে, অন্যদিকে এনটিআরসিএ নিয়োগ বঞ্চিত শিক্ষক ফোরামের সদস্যরা শর্তহীনভাবে নিয়োগ দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন।

তবে এ বিষয়ে এনটিআরসিএ-এর অবস্থান এখনও কঠোর। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনকারীদের চূড়ান্ত নিয়োগ সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন এনটিআরসিএ সচিব এ এম রিজওয়ানুল হক। তিনি বলেন, “বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির চূড়ান্ত সুপারিশ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে করা হবে।” তবে কবে নাগাদ সুপারিশ করা হবে বা বিদ্যমান শর্ত শিথিল করা হবে কিনা, সে বিষয়ে তিনি কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানাননি।

ফলে একদিকে হাজার হাজার শূন্য পদ, অন্যদিকে চাকরির অপেক্ষায় থাকা হাজারো নিবন্ধনধারী প্রার্থী—এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় না হওয়ায় দেশের শিক্ষাখাতে শিক্ষক সংকট সহসাই কাটছে না, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।