মার্কিন শুল্কে বাংলাদেশের ‘স্বস্তি’, রপ্তানিতে নতুন দিগন্তের হাতছানি


তীব্র উদ্বেগ ও শঙ্কার অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পাল্টা শুল্কের হারে বড় ধরনের স্বস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রস্তাবিত ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে বাংলাদেশের জন্য চূড়ান্তভাবে ২০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে, যা শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছে।

অন্যদিকে, প্রধান প্রতিযোগী ভারত ও চীনের ওপর যথাক্রমে ৫০ ও ৫৪ শতাংশের বিশাল শুল্কের বোঝা চাপানো হয়েছে। এই নতুন শুল্ক-বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরা।

তারা বলছেন, এই অপ্রত্যাশিত সুযোগকে কাজে লাগাতে হলে বাংলাদেশকে এখনই বন্দর সক্ষমতা বৃদ্ধি, নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর মতো বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

গত ৩১ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশে ৬৭টি দেশের জন্য নতুন এই শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করা হয়। নতুন হার অনুযায়ী, বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিযোগী ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ, পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

বিপদ যেভাবে সুযোগে রূপ নিল

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “বাড়তি শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে সব দেশের পণ্যেরই দাম বাড়বে, এতে সামগ্রিক চাহিদা কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু ভারত ও চীনের চেয়ে আমরা বিপুল ব্যবধানে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় আমাদের রপ্তানি বাড়ানোর একটি বিশাল সুযোগ তৈরি হয়েছে।”

একই মত অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের। তিনি বলেন, “মার্কিন পাল্টা শুল্কহার নিয়ে আমরা যে ‘মহাবিপদে’ ছিলাম, সেটি এখন ‘সুযোগে’ রূপ নিয়েছে। তবে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই। এই সুযোগের শতভাগ সুবিধা নিতে এখনই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।”

করণীয় কী?

সুযোগকে সম্পদে পরিণত করতে হলে বাংলাদেশকে একাধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ড. জাহিদ হোসেনের মতে, “সক্ষমতা বলতে উৎপাদন, সরবরাহ ও বন্দরের গতি বাড়াতে হবে। শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শ্রমিক অসন্তোষ দূর করতে হবে। এসব করতে না পারলে সুযোগ হাতছাড়া হবে।”

এই সুবিধার ফলে চীন ও ভারত থেকে বিনিয়োগ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ড. মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, “বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা করেন। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। আমরা যদি দীর্ঘ সময় এই সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পারি, তাহলে নতুন বিনিয়োগ আসবে।”

রপ্তানিকারকদের স্বস্তি ও নতুন কৌশল

যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, “শুল্কের যে হার নির্ধারণ হয়েছে, তাতে স্বস্তির পাশাপাশি সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। আমাদের ধারণা, চীন থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থানান্তরিত হওয়া অব্যাহত থাকবে, যা আমাদের ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ দেবে।”

তিনি আরও জানান, এই প্রেক্ষাপটে বিজিএমইএ নতুন কৌশল সাজাচ্ছে। তবে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারের পক্ষ থেকে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর মতো নীতিগত সহায়তা জরুরি।