বাফুফে পরীক্ষায় চট্টগ্রামের অবিশ্বাস্য সাফল্য, ২৭ রেফারি উত্তীর্ণ


বাংলাদেশের ফুটবল রেফারিংয়ের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলো চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল রেফারি অ্যাসোসিয়েশন (সিজেএফআরএ)। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) রেফারি কমিটি ও রেফারিজ ডিপার্টমেন্টের অধীনে গত শুক্রবার ও শনিবার অনুষ্ঠিত বিভিন্ন শ্রেণির পদোন্নতি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন চট্টগ্রামের রেফারিরা। চট্টগ্রাম থেকে অংশ নেওয়া মোট ২৯ জন রেফারির মধ্যে ২৭ জনই কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন, যা এক জেলা থেকে পাসের হারের হিসাবে একটি নতুন রেকর্ড।

এই ঐতিহাসিক সাফল্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কঠোর শারীরিক ও লিখিত পরীক্ষার বাধা পেরিয়ে আসা এই সাফল্যকে অনেকেই “মিরাকল” হিসেবে অভিহিত করছেন।

পদোন্নতির তিন স্তরেই চট্টগ্রামের জয়জয়কার

বাফুফের এই পদোন্নতি পরীক্ষা তিনটি ভিন্ন শ্রেণিতে অনুষ্ঠিত হয় এবং চট্টগ্রামের রেফারিরা প্রতিটি স্তরেই তাদের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন।

* তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি: এই শ্রেণিতে ১১ জন রেফারি পদোন্নতি পেয়েছেন। তারা হলেন: মেহেদী হাসান, মো. ইয়াছিন, আনোয়ার হোসেন নিরব, জামাল হোসেন, মো. খায়রুল, আইনুল করিম, মো. সুফিয়ান, দেলোয়ার হোসেন, সাফায়েত হোসেন, ফিরোজ হোসেন এবং আমির হোসেন নিলয়।

* দ্বিতীয় থেকে প্রথম শ্রেণি: এই ধাপেও ১১ জন রেফারি সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তারা হলেন: দিদারুল ইসলাম, এহসানুল হক শাওন, নুরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, এডিসন চাকমা, সাহাবউদ্দিন, শফিউল্লাহ, দেলোয়ার হোসেন রাসেল, পৃথিরাজ, শাহরিয়ার নাফিজ এবং ইহসাক।

* প্রথম শ্রেণি থেকে জাতীয় রেফারি: রেফারিংয়ের সর্বোচ্চ এই ধাপে চট্টগ্রাম থেকে পাঁচজন রেফারি উত্তীর্ণ হয়ে জাতীয় রেফারির এলিট প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তারা হলেন: আবু নসর, আরিফুর ইসলাম, সানোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান এবং নাছির উদ্দিন।

সাফল্যের পেছনের কারিগর ও প্রস্তুতি

এই অবিশ্বাস্য সাফল্যের পেছনে ছিল দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ও কঠোর পরিশ্রম। সিজেএফআরএ-এর সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ফিফা রেফারি আবদুল হান্নান মিরন ছিলেন এই প্রস্তুতির মূল কারিগর।

এই ফলাফল নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, “২৯ জনের মধ্যে ২৭ জন পাশ করেছে, এটা একটা মিরাকল। এই ছেলেদের নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে তিন মাস ধরে কঠোর অনুশীলন করিয়েছি। তাদের ফিটনেস থেকে শুরু করে আইনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেছি। ঢাকায় চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য পাঠানোর আগে আমরা এখানে নিজেরা পরীক্ষা নিয়েছি, যেন তারা নিজেদের সেরাটা দিতে পারে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “এটা সারাদেশে একটি মিরাকেল রেজাল্ট। অনেক জেলায় তো সব মিলিয়ে ২৭ জন রেফারিই নেই। এক জেলা থেকে এতজন পাশ করার ঘটনা বিরল। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের।”

রেফারিদের এই পদোন্নতি পরীক্ষা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। এতে প্রার্থীদেরকে কঠিন ফিটনেস টেস্ট (যেমন: ৪০ মিটার স্প্রিন্ট, ৭৫-২৫ ইন্টারভাল রান) এবং ফুটবলের আইনকানুন সম্পর্কিত লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এই দ্বৈত পরীক্ষায় সাফল্য পাওয়া দীর্ঘ ও সুশৃঙ্খল প্রস্তুতিরই পরিচায়ক।

এই ঐতিহাসিক ফলাফলে চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) আলমগীর হোসেন, একুশে পত্রিকা সম্পাদক নজরুল কবির দীপু, আজীবন সদস্য মাহবুব রহমান রাজিব, মশিউর আলম স্বপন, এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি নজরুল ইসলাম লেদু, দেবাশীষ বড়ুয়া দেবু, সাবেক সহকারী ফিফা রেফারি শরীফুজ্জামান খান টিপু, খোরশেদ আলমসহ সকল কর্মকর্তা উত্তীর্ণ রেফারিদের আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

এক বিবৃতিতে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই সাফল্য ধরে রাখতে এবং রেফারিদের মান উন্নয়নে সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। তাদের এই অর্জন আগামীতে চট্টগ্রামের ফুটবলকে আরও এগিয়ে নিতে এবং জাতীয় পর্যায়ে দক্ষ রেফারির জোগান দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তারা আশাবাদী।