মার্কিন শুল্কের হাওয়া চট্টগ্রামে, আসছে চীনা বিনিয়োগ, বাড়ছে ক্রয়াদেশ


মার্কিন শুল্কনীতির পরিবর্তনের হাওয়ায় নতুন বিনিয়োগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে চট্টগ্রাম। গত দুই সপ্তাহে দুটি বৃহৎ চীনা পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় আট কোটি ডলার বিনিয়োগের চুক্তি করেছে, যা তৈরি পোশাক খাতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এই বিনিয়োগের ঢেউ এবং দেশব্যাপী ক্রয়াদেশ বৃদ্ধির মূলে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ভারত ও চীনের ওপর আরোপিত বাড়তি পাল্টা শুল্ক।

এই পরিবর্তনের ফলে শুধু নতুন বিনিয়োগই নয়, মার্কিন ক্রেতারাও তাদের ক্রয়াদেশ ভারত ও চীন থেকে সরিয়ে বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে চকরিয়া থেকে শুরু করে সারাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে নতুন করে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

গত ৩১ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত নতুন শুল্ক কাঠামো অনুযায়ী, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা চীনের ৩০ শতাংশ এবং ভারতের ২৫ শতাংশের চেয়ে কম। সবচেয়ে বড় সুবিধা তৈরি হয়েছে ভারতের ক্ষেত্রে; দেশটির ওপর রাশিয়ার জ্বালানি কেনার ‘শাস্তিস্বরূপ’ আরও ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।

এরই মধ্যে বাংলাদেশি কারখানাগুলো এই পরিবর্তনের ইতিবাচক প্রভাব পেতে শুরু করেছে। দেশের অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম খালেদ জানান, “আমাদের কারখানায় গত বছর একটি মার্কিন ক্রেতার জ্যাকেটের কাজ হয়েছে ৭টি প্রোডাকশন লাইনে। তারা এখন যে বাড়তি ক্রয়াদেশ দিতে চাচ্ছে, তাতে মোট ১৭টি লাইন লাগবে।”

স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলামও জানান, ভারত ও ভিয়েতনাম থেকে ক্রয়াদেশ স্থানান্তরের জন্য একাধিক মার্কিন ক্রেতার সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, “আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্মের জন্য আমাদের কাছে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি ক্রয়াদেশ রয়েছে।”

তবে এই সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জও দেখছেন শিল্প নেতারা। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, “ক্রেতারা প্রথমে ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবে। আমাদের চেষ্টা করতে হবে শুধু স্থানান্তরিত ক্রয়াদেশ নয়, বরং নতুন ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার।”

এদিকে, চট্টগ্রামে চীনা বিনিয়োগের এই ধারা কেবল দুটি প্রতিষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) জানায়, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৩৪টি চীনা বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে তারা, যার মধ্যে হান্ডা (বাংলাদেশ) গার্মেন্টস ও খাইশি গ্রুপসহ ৮টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১৫ কোটি ডলারের চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এই বিনিয়োগকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, “চীনারা বিনিয়োগের পাশাপাশি ক্রেতাও নিয়ে আসে, যা আমাদের রপ্তানি বাড়াবে। তবে এই বাড়তি ক্রয়াদেশ নিতে হলে ব্যাংক, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং কাস্টমসের কার্যকর সহযোগিতা অপরিহার্য।”