
আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, ডাল, তেলসহ অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম কমে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগের পর্যায়ে নেমে এলেও বাংলাদেশে তার তেমন প্রভাব পড়েনি। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় সাফল্য দেখালেও বাংলাদেশে তা এখনও সাড়ে আট শতাংশের ওপরে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডলারের বিনিময় হারের প্রভাবের পাশাপাশি বাজারের ওপর মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণ, প্রতিযোগিতা না থাকা এবং কার্যকর তদারকির অভাবেই ভোক্তারা বিশ্ববাজারের সুফল পাচ্ছেন না।
শ্রীলঙ্কায় এখন মূল্যস্ফীতি ঋণাত্মক, অর্থাৎ সেখানে পণ্যের দাম কমছে। চরম সংকটে থাকা পাকিস্তানেও মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশের কাছাকাছি নেমে এসেছে। ভারতে তা ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বিপরীতে গত জুলাইয়ে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ছিল সাড়ে ৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) তথ্য অনুযায়ী, এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম ৩৮ শতাংশ কমেছে। কিন্তু দেশে ভালো ফলন ও বিপুল পরিমাণ আমদানির পরও দাম না কমে উল্টো বেড়েছে। একইভাবে, বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম ৪৪ শতাংশ কমলেও দেশে কমেছে মাত্র ১৭ শতাংশ।
জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম যুদ্ধ শুরুর আগের চেয়েও কম। কিন্তু দেশে ডিজেলের দাম কমেছে সামান্যই, যা বর্তমানে ১০২ টাকা। আবার রান্নার গ্যাস এলপিজির কাঁচামালের দাম কমলেও গ্রাহকদের তা কিনতে হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দামে।
তবে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান মনে করেন, দেশের বাজারদর আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ‘সংগতিপূর্ণ’। আর জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলছেন, প্রতিবেশী দেশে পাচারের আশঙ্কায় তেলের দাম কমানো হচ্ছে না।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ভোক্তার স্বার্থ না দেখে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মুনাফাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবং পাচারের অজুহাত ‘সংগতিপূর্ণ নয়’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, বাজারে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা আগের মতোই থাকায় এবং কোনো ‘দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ’ না নেওয়ায় মূল্যস্ফীতি আশানুরূপ কমছে না।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার ডলারের বাজার স্থিতিশীল এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিসহ অর্থনীতির পতন ঠেকাতে পারলেও সাধারণ ভোক্তারা এখনও চাল, ডাল, তেল, ডিম, মুরগিসহ নিত্যপণ্যের চড়া দামের কারণে হিমশিম খাচ্ছেন।
