শিক্ষক নিয়োগ: আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিংয়ে পেছানোর কারণ কি পিএইচডি-গবেষণায় গুরুত্বহীনতা?


বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেখানে শিক্ষক নিয়োগে পিএইচডি ডিগ্রি এবং গবেষণাকে সর্বনিম্ন যোগ্যতা হিসেবে দেখে, সেখানে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনও প্রাধান্য পাচ্ছে এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফল।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, নিয়োগ পদ্ধতির এই দুর্বলতা, স্বজনপ্রীতি এবং দলীয়করণের কারণেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে পারছে না, যা বৈশ্বিক র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের দুর্বল অবস্থানের অন্যতম প্রধান কারণ।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কিউএস-এর ২০২৫ সালের র‍্যাংকিং অনুযায়ী, বিশ্বের সেরা ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানই স্থান পায়নি, যেখানে চীনের পাঁচটি ও সিঙ্গাপুরের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় সেরা ১০০-এর মধ্যে রয়েছে।

নিয়োগ পদ্ধতির বৈপরীত্য

র‍্যাংকিংয়ে অষ্টম স্থানে থাকা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর বা ১৪তম স্থানে থাকা চীনের পিকিং ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক নিয়োগের ন্যূনতম যোগ্যতা পিএইচডি।

বিপরীতে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি প্রণীত শিক্ষক নিয়োগের খসড়া নীতিমালায় দেখা যায়, ১০০ নম্বরের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য বরাদ্দ মাত্র ৫ নম্বর, যা এইচএসসির ফলাফলের জন্য নির্ধারিত ১০ নম্বরেরও অর্ধেক।

এ বিষয়ে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “এই নীতিমালা এখনো পরীক্ষামূলক। পিএইচডির নম্বর নিয়ে যে আলাপ চলছে, ভবিষ্যতে এসব নিয়ে আবারো আলোচনার সুযোগ রয়েছে।”

মানের সংকট ও তার প্রভাব

শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুর্বল নিয়োগ ব্যবস্থার কারণে অদক্ষ শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করছেন, যা শিক্ষার সার্বিক মানে প্রভাব ফেলছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম বলেন, “সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অদক্ষ শিক্ষক নিয়োগ।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ২০১৬ সালের এক প্রতিবেদনেও দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি এবং ৩ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তোলা হয়েছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী তুহিন ইসলাম তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, “আমাদের এমন অনেক শিক্ষক ছিলেন যারা ভালোভাবে পড়াতে পারতেন না এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় নিয়মিত ক্লাসও নিতেন না। এর ফলে আমাদের একধরনের ঘাটতি নিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করতে হয়েছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, “আমরা অনেক সময় মেধাবী তরুণদের মাস্টার্স শেষ করার পরপরই শিক্ষকতায় আসার সুযোগ দিই, যাতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গবেষণার পথে অগ্রসর হতে পারেন। তবে ভবিষ্যতে শিক্ষক নিয়োগে পিএইচডিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার দিকেই আমাদের যাত্রা।”

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফয়েজ দেশে পিএইচডি ডিগ্রিধারীর ঘাটতির কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, “শিক্ষাগত যোগ্যতার মার্কিং করা হলে পিএইচডির নম্বর অবশ্যই ৫-এর অধিক হওয়া উচিত। আমরা শিক্ষকদের গবেষণায় উৎসাহিত করার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছি, আশা করছি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ভালো অবস্থানে পৌঁছবে।”