
বাংলাদেশে ৩০ থেকে ৭৯ বছর বয়সী প্রায় ২ কোটি ২৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক উচ্চ রক্তচাপে ভুগলেও তাদের মধ্যে মাত্র ৩৬ লাখ মানুষের এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অর্থাৎ, প্রায় ১ কোটি ৯২ লাখ প্রাপ্তবয়স্কের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
সোমবার প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উচ্চ রক্তচাপ বিষয়ক সর্বশেষ বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এই উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে।
‘গ্লোবাল রিপোর্ট অন হাইপারটেনশন ২০২৫’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপে ভোগা প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় অর্ধেকই (৪৮%) জানেন না যে তাদের এ রোগ রয়েছে। আর যারা নিজেদের রোগ সম্পর্কে অবগত, তাদের মধ্যে চিকিৎসা পাচ্ছেন মাত্র ৩৯ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে স্ট্রোক, হৃদরোগ ও কিডনি রোগের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়তেই থাকবে।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, “অনেকেই জানেন না যে তিনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এজন্য দেশব্যাপী স্বল্প খরচে স্ক্রিনিং কর্মসূচি চালু করতে হবে। হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকে রক্তচাপ মাপার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি আরও জানান, রোগ শনাক্ত হওয়ার পর জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেওয়া হলেও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ওষুধ সেবন অপরিহার্য।
অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, “সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতে প্রাথমিক পর্যায়ে ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে ৪৬০টি উপজেলার এনসিডি কর্নারে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ দেওয়া হলেও গত এক বছর ধরে বাজেট সংকটের কারণে সেখানে তীব্র ওষুধ সংকট রয়েছে।”
ডব্লিউএইচও-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ১.৪ বিলিয়ন মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগলেও প্রতি পাঁচজনের মধ্যে মাত্র একজনের এটি নিয়ন্ত্রণে আছে।
ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস পাবলিক হেলথ প্রোগ্রামের প্রধান ড. কেলি হেনিং বলেন, “উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও প্রতি বছর ১ কোটিরও বেশি মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে।”
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের হার ২৮ শতাংশ, যা বৈশ্বিক হার ৩৪ শতাংশের চেয়ে কম। তবে রোগ নিয়ন্ত্রণের হার মাত্র ১৬ শতাংশ, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্যমাত্রা ৫০ শতাংশের চেয়ে অনেক নিচে।
