
সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও দুই মাস অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বৃষ্টিপাত কমলেও এডিস মশার বংশবিস্তার অনুকূলে থাকায় এই পরিস্থিতি নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
এরই মধ্যে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বাড়ায় বাংলাদেশকে ভ্রমণের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্তরের স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৪৪ হাজার ৪৭৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায়ও একজনের মৃত্যু এবং ৬৩২ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন।
মৃত্যুর কারণ ও নতুন ধরন
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর জানান, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর প্রধান কারণ ‘শক সিনড্রোম’। এছাড়া রোগীদের হাসপাতালে দেরিতে আসা এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগ থাকায় মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে।
চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া রোগীদের ৫৭ শতাংশই হাসপাতালে ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছেন।
এদিকে, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমীনা শিরিন জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর ধরন-২ এর পাশাপাশি ঢাকায় ধরন-৩ এ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “ডেঙ্গু সংক্রমণ কমাতে সরকার ও জনগণ মিলে সমন্বিতভাবে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসাব্যবস্থা অতিমাত্রায় কেন্দ্রীভূত হওয়ায় মৃত্যুর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করতে পারলে মৃত্যুহার কমানো সম্ভব।
এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতালগুলোর জন্য ১১টি নির্দেশনা জারি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—জরুরি ভিত্তিতে রোগীদের এনএস-১ পরীক্ষা করা, হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা ল্যাবরেটরি সেবা চালু রাখা, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড বা কর্নার স্থাপন এবং আইসিইউতে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া। এই নির্দেশনায় স্বাক্ষর করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান।
যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা
সিডিসির সতর্কবার্তায় বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাবের কথা উল্লেখ করে ভ্রমণকারীদের মশার কামড় এড়িয়ে চলার এবং টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ভ্রমণের সময় বা পরে জ্বর, জয়েন্টে ব্যথা বা ফুসকুড়ির মতো উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে বলা হয়েছে।
