গাজায় ৪ হাজার শিশুর অঙ্গহানি, নিহত ২০ হাজারের বেশি


প্রায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের গাজায় প্রায় চার হাজার শিশুর অঙ্গহানি ঘটেছে, যা বিশ্বের যেকোনো সংঘাতের মধ্যে সর্বোচ্চ। একই সময়ে নিহত হয়েছে ২০ হাজারের বেশি শিশু।

জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে শিশুদের ওপর এই নৃশংসতার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বুধবার এক বিবৃতিতে জানান, গাজার শিশুরা চরম মানসিক আঘাতের শিকার হচ্ছে। তিনি বলেন, “এই নৃশংসতা যত দীর্ঘায়িত হবে, শিশুদের মানসিক ক্ষত ততই গভীর হবে। অন্তত শিশুদের কথা চিন্তা করে হলেও গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।”

মানবিক সহায়তাবিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির (আইআরসি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বোমা হামলায় ছিটকে আসা বস্তুর আঘাতেই শিশুরা সবচেয়ে বেশি আহত হচ্ছে। সংস্থাটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কিয়ারান ডনলি বলেন, “অঙ্গহানির শিকার শিশুরা তাদের হাত-পা হারিয়েছে। অনেকে দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার করে ঘুম থেকে জেগে উঠছে। তারা তাদের পরিবারের মধ্যেও নিরাপদ বোধ করছে না।”

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গাজায় বর্তমানে ৭০ শতাংশ শিশুর ঘুমের সমস্যা হচ্ছে এবং প্রতি পাঁচ শিশুর একটি কথা বলা কমিয়ে দিয়েছে বা নীরব হয়ে গেছে।

আইআরসির জরিপে দেখা গেছে, তিন বছরের কম বয়সী প্রতি তিন শিশুর একজন আগের ২৪ ঘণ্টায় এক বেলা খাবারও খায়নি। ইউনিসেফের তথ্যমতে, গাজায় বর্তমানে ২৬ হাজারের মতো শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত দুই বছরে অনাহারে উপত্যকাটিতে অন্তত ১৪৭টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় দুই বছরের হামলায় গাজায় ৬৫ হাজার ৪১৯ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২০ হাজারের বেশি শিশু বলে জানিয়েছে ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’। সম্প্রতি গাজা নগরীতে বোমা হামলায় একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে দুই শিশু সন্তানসহ গাদা রাবাহ নামে এক নারী নিহত হন। এর আগে একই ধরনের ঘটনায় নিহত হয়েছিল শিশু হিন্দ রজব।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এক অধিবেশনে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন চিকিৎসক তহায়ের আহমেদ ১০ বছর বয়সী শিশু রাশার গল্প তুলে ধরেন। ইসরায়েলি হামলায় নিহত হওয়ার আগে রাশা এক চিঠিতে লিখেছিল, “আমি যদি শহীদ হই, দয়া করে আমার জন্য কেউ কান্নাকাটি কোরো না। আশা করি, আমার পোশাকগুলো যাদের দরকার, তাদের দেওয়া হবে।”

একই অনুষ্ঠানে বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রেভট বলেন, “যুদ্ধের কিছু নিয়ম আছে, যা মানবিকতা থেকে শুরু হয়। এই নিয়মের বিরুদ্ধে যাওয়া মানে শুধু আইন ভাঙা নয়, এটি বিশ্বাসঘাতকতাও।”