
চট্টগ্রাম বিভাগের একাধিক সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভয়াবহ দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ওষুধ গুদামে মজুত রেখে রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য করা, রোগীর খাবার আত্মসাৎ এবং কেনাকাটায় অনিয়মসহ গুরুতর সব অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে সংস্থাটি।
দুদকের অনুসন্ধানে দেশব্যাপী ৬৪টি দুর্নীতিগ্রস্ত হাসপাতালের তালিকায় নাম এসেছে চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা ও বাঁশখালী এবং কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আরও কয়েকটি হাসপাতালও এই তালিকায় রয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত দুদকের এই অভিযানে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার এই ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় প্রতিটি অভিযুক্ত হাসপাতালেই একই ধরনের দুর্নীতির চিত্র বিদ্যমান।
দুদক সূত্র জানায়, অভিযুক্ত হাসপাতালগুলোতে মূলত সাত ধরনের অনিয়ম হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর হলো—সরকারি ওষুধ থাকা সত্ত্বেও রোগীদের ‘সাপ্লাই নেই’ বলে ফিরিয়ে দেওয়া এবং সেগুলো গুদামে ফেলে রেখে মেয়াদোত্তীর্ণ করা।
এছাড়া রোগীদের জন্য বরাদ্দের চেয়ে পরিমাণে কম ও নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতি ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার না করা এবং কেনাকাটা ও নিয়োগে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

যদিও চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোর সুনির্দিষ্ট অনিয়মের বিবরণ আলাদাভাবে প্রকাশ করা হয়নি, তবে দেশব্যাপী পরিচালিত অভিযানে পাওয়া চিত্রকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছে দুদক। যেমন, যশোরের ২৫০ শয্যা হাসপাতালে পর্যাপ্ত স্যালাইন থাকার পরও রোগীদের তা বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য করা হয়েছে।
সেখানকার তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়েত নিজের অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করে দুদককে জানান, হাসপাতালকে কেন্দ্র গড়ে উঠা শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে তিনি অনিয়ম বন্ধ করতে পারছেন না। একইভাবে গাজীপুরের কাপাসিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ সরকারি ওষুধ জব্দ করা হয়েছে।
এই দুর্নীতির বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “দুদক যা পেয়েছে, তা সবারই জানা। এখন এই দুর্বৃত্তদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”
তবে এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসচিব সাইদুর রহমান এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর—উভয়েই জানিয়েছেন, দুদক এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কিছু জানায়নি। জানানো হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুদকের এই অভিযানের পর অভিযুক্ত হাসপাতালগুলোর অন্তত ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ইতোমধ্যে বরখাস্তসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
