অবশেষে বৈধতা পাচ্ছে ইজিবাইক, দেশজুড়ে নিবন্ধনের উদ্যোগ সরকারের


এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সারা দেশে অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলার পর অবশেষে নিবন্ধনের আওতায় আসছে ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার বা ইজিবাইক। দেশে থাকা আনুমানিক ৪০ লাখ ইজিবাইককে বৈধতা দিতে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) পৃথক দুটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন বাহনটির নিরাপত্তামান নিশ্চিত করা হবে, তেমনি এটিকে ঘিরে একটি শিল্পখাত গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।

বিগত এক দশকে নীতিমালার অভাবে ইজিবাইকের আমদানি ও চলাচল নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে শিল্প মন্ত্রণালয় ‘ইলেকট্রিক ভেহিকল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২৫’ এবং বিআরটিএ ‘বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০২৫’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।

ইজিবাইকগুলোকে নিবন্ধনের আগে সেগুলোকে নিরাপদ করে তোলার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ইতোমধ্যে বিদ্যমান ইজিবাইকগুলোর জন্য একটি উন্নত ও নিরাপদ মডেল তৈরি করেছে।

বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের (বিইপিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন জানান, বুয়েটের মডেলে হাইড্রোলিক ব্রেক, দুই পাশে দরজা, উইন্ডশিল্ড ও ইন্ডিকেটরের মতো নিরাপত্তা সরঞ্জাম যুক্ত করা হয়েছে। একটি পুরনো ইজিবাইককে এই মডেলে রূপান্তর করতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। এছাড়া, সম্পূর্ণ নতুন ও নিরাপদ একটি থ্রি-হুইলারের প্রোটোটাইপও তৈরি করেছে বুয়েট, যা দেশেই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা সম্ভব।

বিআরটিএ-এর নীতিমালার মূল লক্ষ্য সড়ক নিরাপত্তা। এর আওতায় ইজিবাইকগুলোকে নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে চলাচলের অনুমতি দেওয়া, মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ করা এবং চালকদের প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে।

অন্যদিকে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার লক্ষ্য হলো বৈদ্যুতিক যানবাহন শিল্পখাতের বিকাশ। এর আওতায় দেশে উন্নতমানের বৈদ্যুতিক যান ও যন্ত্রাংশ উৎপাদনের পরিবেশ তৈরি, যন্ত্রাংশ রপ্তানিতে নগদ সহায়তা এবং এ খাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

তবে এই উদ্যোগ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, “নীতিমালা তৈরি হওয়াটা সুখবর নয়, কেননা অতীতে অনেক ভালো নীতিমালা হলেও সেগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি।” তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের দ্বিমুখী নীতির সমালোচনা করে বলেন, “একদিকে তারা দূষণ কমাতে বৈদ্যুতিক যানের কথা বলছে, অন্যদিকে পুরোনো রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির বয়সসীমা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেছে, যা সাংঘর্ষিক।”

র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক ব্যবহৃত ব্যাটারির পরিবেশসম্মত নিষ্কাশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “পুরনো ব্যাটারিগুলো কোথায় ফেলা হবে এবং সেগুলো পুনর্ব্যবহারের সুবিধা দেশে আছে কিনা, তা আগে খতিয়ে দেখতে হবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লক্ষ লক্ষ ইজিবাইককে নিবন্ধনের আওতায় আনার এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সফল করতে হলে নীতিমালার সঠিক বাস্তবায়ন, পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবিলা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই।