
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের অন্তত সাতটি পয়েন্ট ব্যবহার করে দেশে অবৈধ অস্ত্রের চালান ঢোকাচ্ছে কমপক্ষে পাঁচটি চক্র, যাদের প্রত্যেকটির সঙ্গেই কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এসব অস্ত্রের প্রধান গন্তব্য কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং তিন পার্বত্য জেলার সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আস্তানা। সাম্প্রতিক সময়ে মাদক ও মানব পাচারের সঙ্গেও অস্ত্র চোরাচালান আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. সাইফউদ্দীন শাহীন জানান, গত ৫ অক্টোবর উখিয়ার পালংখালী সীমান্ত থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ইয়াবাসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় পাচারকারী চক্রের জন্য মিয়ানমার থেকে অস্ত্র পাচার সহজ হয়ে উঠেছে।”
সূত্রমতে, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের বাইশফাঁড়ি, বালুখালী কাস্টমস ঘাট এবং উখিয়ার পালংখালী ও হোয়াইক্যংয়ের নলবনিয়াসহ নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এসব অস্ত্র আনা হচ্ছে।
অস্ত্র পাচারে সক্রিয় পাঁচটি চক্রের মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারটি সশস্ত্র দল—আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), নবী হোসেন গ্রুপ এবং কেফায়েত উল্লাহ ওরফে আব্দুল হালিমের নেতৃত্বাধীন হালিম গ্রুপ। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদের একটি বড় চক্রও এর সঙ্গে জড়িত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর সংঘাতের পর থেকে অস্ত্রের চোরাচালান ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আরাকান আর্মি এবং আরসা ও আরএসও-এর মতো রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) ও সেনাবাহিনীর ঘাঁটি দখল করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র লুট করে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) রামু সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, মিয়ানমারের অস্ত্র এখানে আনার পর পাচারকারীরা তা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান জানান, গত দেড় বছরে তাদের অভিযানে ১ হাজার ২৭৯টি অস্ত্র উদ্ধারসহ ১৬৩ জন অস্ত্রধারীকে আটক করা হয়েছে।
নতুন উদ্বেগজনক তথ্য হলো, রাখাইনে খাদ্য সংকটের কারণে আরাকান আর্মি এখন লুটে নেওয়া অস্ত্র বাংলাদেশের অপরাধী চক্রের কাছে বিক্রি করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিনিময়েও অস্ত্র বিনিময় হচ্ছে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাইল আহমদ সম্প্রতি এক সভায় বলেন, “বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে আরাকানে নিত্যপণ্য পাচার এমনই বেড়েছে যে, কক্সবাজারের হাজী বিরিয়ানি দিয়ে আরাকান আর্মির সকালের নাশতা সারা হচ্ছে।”
