
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা—এই দুই সংকটের মধ্যেই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের ভূমিকা নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত এক বছরে চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন অপরাধ দমনে র্যাবের নিষ্ক্রিয়তা দৃশ্যমান হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার আসন্ন নির্বাচনে এই বিশেষায়িত বাহিনীকে কীভাবে কাজে লাগাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
২০০৪ সালে আত্মপ্রকাশের পর জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থী দমনে প্রশংসিত হলেও পরবর্তীতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের মতো গুরুতর অভিযোগে র্যাবের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র র্যাব এবং এর তৎকালীন ও সাবেক সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
এরই মধ্যে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে গুমের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা এক মামলায় র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন, ব্যারিস্টার মো. হারুন-অর-রশিদ এবং সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, কর্নেল কেএম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুব আলম, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন এবং সাবেক পরিচালক লে. কর্নেল মো. সারোয়ার বিন কাশেম, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম, লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল ও লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, “বিগত সময়ে র্যাব গুম-খুনের মতো অপরাধের সঙ্গে এত বেশি মাত্রায় যুক্ত হয়েছে যে তাদের ওপর আস্থা রাখার সুযোগ নেই। র্যাবকে সেনাবাহিনীর সদস্য প্রেষণে না দিয়ে শুধু পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবেই কার্যকর রাখা উচিত।”
তবে সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক মনে করেন, র্যাবের সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, “যারা র্যাবে থেকে অপরাধে যুক্ত হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে র্যাবকে বের করে এনে একটি পেশাদার বাহিনী হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তাদের কাজে লাগালে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।”
এসব অভিযোগ ও র্যাবের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে জানতে চাইলে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এমজেডএম ইন্তেখাব চৌধুরীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
