চাকসু নির্বাচন: ৩৫ বছরের অচলায়তন ভেঙে কে আসবে নেতৃত্বে?


দীর্ঘ ৩৫ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। ১৯৯০ সালের পর এই প্রথমবার শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি বেছে নিতে ভোট দিচ্ছেন।

সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে এই ভোটগ্রহণ। এবারের নির্বাচনে প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার শিক্ষার্থী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় ক্যাম্পাস ছিল মূলত ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে, যেখানে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের চেয়ে প্রভাব বিস্তার ও সংঘাতের রাজনীতিই ছিল মুখ্য। আবাসন সংকট, খাবারের নিম্নমানের সমস্যা এবং পরিবহন সংকট ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে সেই অচলাবস্থার অবসান ঘটবে এবং ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে।

ফিরে দেখা চাকসু

১৯৬৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গেই গঠিত হয় চাকসু। তবে ৫৯ বছরের ইতিহাসে নির্বাচন হয়েছে মাত্র ছয়বার—১৯৭০, ১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮১ এবং সর্বশেষ ১৯৯০ সালে।

১৯৯০ সালের নির্বাচনে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যে’র প্যানেল থেকে ভিপি নির্বাচিত হন জাতীয় ছাত্রলীগের মো. নাজিম উদ্দিন এবং জিএস নির্বাচিত হন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আজিম উদ্দিন আহমদ।

মূল লড়াইয়ে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির

গণ-অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবারের নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোটে’র মধ্যে।

দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে কোণঠাসা থাকার পর এই দুই সংগঠনই এখন জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির বলেন, “গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি এবং জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।”

অন্যদিকে, ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোটে’র ভিপি প্রার্থী ইব্রাহীম হোসেন রনি বলেন, “নির্বাচনি প্রচারে চমৎকার পরিবেশ ছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের পক্ষেই রায় দেবেন বলে আমরা আশাবাদী।”

১৯৮১ সালের নির্বাচনে ছাত্রশিবির ভিপি-জিএসসহ অধিকাংশ পদে জয়লাভ করেছিল। সেবার ভিপি হন জসিম উদ্দিন সরকার এবং জিএস আব্দুল গাফফার।

নির্বাচনের পরিসংখ্যান

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৬ জন। চাকসুর ২৬টি পদের জন্য ৪১৫ জন এবং ১৪টি হল ও একটি হোস্টেলের ২১০টি পদের জন্য ৪৯৩ জনসহ মোট ৯০৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে মোট ১৩টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে।

এর আগে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে। সেই ধারাবাহিকতায় চাকসু নির্বাচনের ফলের দিকেই এখন তাকিয়ে আছে সবাই।