কঠোর নিরাপত্তায় চলছে চাকসুর ভোটগ্রহণ


দীর্ঘ ৩৬ বছরের অচলায়তন ভেঙে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। উৎসবমুখর পরিবেশ আর নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বুধবার সকাল ৯টা থেকে এই ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, যা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

১৯৯০ সালের পর এই প্রথম শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার সুযোগ পাওয়ায় ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে উচ্ছ্বাস। বিশেষ করে যারা জীবনে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন, তাদের মধ্যে উত্তেজনা ছিল চোখে পড়ার মতো।

ভোটকেন্দ্রে সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আজিমুল সাকিব সজীব বলেন, “ভর্তি হওয়ার তিন মাসের মধ্যেই চাকসু নির্বাচন পাচ্ছি। এটি আমার জন্য যেকোনো ধরনের প্রথম ভোট। সেজন্য এটা নিয়ে আমার আশাও অনেক বেশি। সচেতনভাবেই ভোট দিতে যাব।”

দর্শন বিভাগের ছাত্র তৈমুল হাসিব বলেন, “গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চাকসুতে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি, এটা আমার জন্য বিরাট পাওয়া। প্রথমবার ভোট দেওয়ার আনন্দই অন্যরকম।”

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও এপিবিএনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ১ হাজার ৭০০ সদস্য মোতায়েন রয়েছেন এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে প্রস্তুত রয়েছে সেনাবাহিনী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী জানান, ক্যাম্পাসে প্রবেশের ৩৩টি পথের মধ্যে ৭টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং বাকি পথগুলোতে পরিচয়পত্র ছাড়া প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

র‍্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাফিজুর রহমান বলেন, “র‍্যাবের আটটি টিম টহল দিচ্ছে। আশা করি, শান্তিপূর্ণভাবেই নির্বাচন সম্পন্ন হবে।”

এবারের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হচ্ছে ব্যালট পেপারে এবং গণনা করা হবে ওএমআর মেশিনে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, “স্বচ্ছতা ও দ্রুততার জন্য আমরা ওএমআর পদ্ধতি ব্যবহার করছি। গোপন কক্ষ ছাড়া সব কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে এবং প্রতিটি ব্যালটে বিশেষ নিরাপত্তা কোড রয়েছে।”

একজন ভোটারকে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪০টি পদে ভোট দিতে হচ্ছে। সময়ের বিষয়ে ড. মনির উদ্দিন জানান, কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, ভোটাররা পর্যাপ্ত সময় নিয়েই ভোট দিতে পারবেন।

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৬ জন। চাকসুর ২৬টি পদের জন্য ৪১৫ জন এবং ১৪টি হল ও একটি হোস্টেলের ২০৬টি পদের জন্য ৪৯৩ জনসহ মোট ৯০৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

গণ-অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবারের নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোটে’র মধ্যে। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে কোণঠাসা থাকার পর এই দুই সংগঠনই এখন জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

এর আগে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে। সেই ধারাবাহিকতায় চাকসু নির্বাচনের ফলের দিকেই এখন তাকিয়ে আছে সবাই।