চাকসু নির্বাচন: নারী ও ছাত্রলীগের ভোটেই নির্ধারণ হবে জয়-পরাজয়?


দীর্ঘ ৩৬ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে নারী শিক্ষার্থী এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সমর্থকদের ভোট।

বুধবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এই নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোটে’র মধ্যে। উভয় প্যানেলই এই দুটি বড় ভোটব্যাংককে কাছে টানতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নানা কৌশল অবলম্বন করেছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একচ্ছত্র আধিপত্যের অবসান ঘটলেও সংগঠনটির প্রায় আড়াই হাজার সমর্থক ভোটার রয়েছেন, যাদের ভোট এবারের নির্বাচনের ফলাফলে বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ছাত্রলীগ সমর্থক জানান, ক্যাম্পাসে নির্বিঘ্নে চলাফেরা ও ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির—উভয় পক্ষই তাদের ভোট চেয়েছে।

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের প্রায় ৪০ শতাংশ নারী হওয়ায় তাদের ভোট প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে। ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির উভয় প্যানেলই নারী শিক্ষার্থীদের সমর্থন আদায়ে ক্যাম্পাসে পৃথক বৈঠক করেছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়েছে।

এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মূল দুই প্যানেলের অভিভাবক সংগঠন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীও পর্দার আড়ালে সক্রিয় রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত তাদের ছাত্র সংগঠন শিবিরের প্যানেলকে জেতাতে একটি তদারকি টিম গঠন করেছে।

টিমের সদস্য ও মহানগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী বলেন, “আশা করি, চাকসু নির্বাচনেও শিবিরের প্যানেল জয়লাভ করবে।” শিবির-সমর্থিত ভিপি প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনিও জামায়াতের পক্ষ থেকে পরামর্শ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হারুন জামান জানান, ছাত্রদলের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক টিম গঠন না করা হলেও দলের সিনিয়র নেতারা খোঁজখবর রাখছেন ও পরামর্শ দিচ্ছেন। ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন নয়নও (হৃদয়) একই কথা জানান।

নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ছাত্রদল। ভোটের গণনা ওএমআর মেশিনে করার সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় বলেন, “আমরা কমিশনকে বারবার বলেছি, ভোট যেন হাতে গণনা করা হয়। কমিশন একটি নির্দিষ্ট প্যানেলের দিকে ঝুঁকে পড়েছে বলে আমরা সন্দিহান।”

তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু করতেই ব্যালট ছাপানোসহ কিছু বিষয় গোপন রাখা হয়েছে।”

এদিকে, নির্বাচনের ঠিক আগে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ মামুন উর রশিদকে সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরকে নিয়ে ফেসবুকে ‘কটাক্ষ’ করেছিলেন বলে জানা গেছে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। র‍্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাফিজুর রহমান বলেন, “শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কোনো হুমকি নেই। আশা করি, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।”