
তিন দশক পেরিয়ে গেলেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) সংঘটিত ট্রিপল মার্ডারের বিচার না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। তারা অবিলম্বে মেধাবী শিক্ষার্থী ডা. মিজানুর রহমানসহ তিনজনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি পুনরায় চালু করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার সকালে চমেক কনফারেন্স হলে শহীদ ডা. মিজানুর রহমানের ৩২তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তারা এই দাবি তোলেন। ডা. মিজান স্মৃতি ফাউন্ডেশন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, ১৯৯৩ সালের ১৮ অক্টোবর ছাত্রলীগের তৎকালীন চমেক ছাত্র সংসদের ভিপি ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী ও জিএস ডা. রবিউল করিমের নেতৃত্বে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। কিন্তু তৎকালীন প্রশাসনের ‘প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে’ এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মামলার আসামিরা বেকসুর খালাস পেয়ে যায়, যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও চমেক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল ইউনিভার্সিটির সিন্ডিকেট সদস্য ডা. এ কে এম ফজলুল হক।
ডা. এ কে এম ফজলুল হক বলেন, “বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই মিজানদের মতো মেধাবীদের হত্যার বিচার হয় না। অবিলম্বে এই হত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে হত্যাকারীদের সুষ্ঠু বিচার করতে হবে।”
বক্তারা আরও বলেন, “যদি ডা. মিজান হত্যার বিচার সময়মতো হতো, তাহলে পরবর্তীতে বিডিএস ছাত্র আবিদ, সাকিব হোসেন বা ওয়াকিলদের মতো তরুণদের এমন নির্মম পরিণতি ভোগ করতে হতো না এবং চমেকের হলগুলো ‘আয়নাঘরে’ পরিণত হতো না।”
তারা ক্যাম্পাসে ভবিষ্যতে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতন প্রতিরোধে দল-মত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং ‘ফ্যাসিবাদী-নিষিদ্ধ দলের’ কাউকে পুনর্বাসনের সুযোগ না দেওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জসিম উদ্দীন, চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. তসলিম উদ্দিন, ৩২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. ইফতেখারুল ইসলাম, ৩০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. মো. আবু নাসের, চট্টগ্রাম মা ও শিশু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. এটিএম রেজাউল করিম এবং শহীদ ডা. মিজান স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ডা. মুসলিম উদ্দিন সবুজ, চমেক হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. এ ওয়াই এম এন জাহাঙ্গীর, ডা. বেলায়েত হোসেন ঢালী, ডা. সাইফুল আজম সাজ্জাদ, ডা. মোহাম্মদ রেজাউল করিম ও ডা. ইমরোজ উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ডা. এস এম কামরুল হক এবং কোরআন তেলাওয়াত করেন হাফেজ ডা. মো. মুজিবুল হক। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন ডা. ইকবাল মাহমুদ ও ডা. এম এস মুস্তাকিম।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়।
