অর্থনীতিতে শ্লথগতি, মন্দা দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা


চট্টগ্রাম বন্দরে অচলাবস্থা, পুঁজিবাজারে দরপতন, রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতি এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শ্লথগতি বিরাজ করছে, যা চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আরও ঘনীভূত হয়ে মন্দা দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা তৈরি করেছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।

আমদানিনির্ভর অর্থনীতির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানেও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে পণ্য আমদানির পরিমাণ ৬২৭ কোটি ডলার থাকলেও আগস্টে তা কমে ৫২২ কোটি ডলারে নেমেছে। আগামী নভেম্বর পর্যন্ত আমদানি আরও কমে ৪৬৭ কোটি ডলারে স্থির থাকতে পারে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে, যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বৃহৎ শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়ায় এবং মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি প্রায় স্থবির হয়ে পড়ায় নতুন বিনিয়োগ কার্যত বন্ধ রয়েছে। তারা আসন্ন জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত ‘অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণে’র নীতি গ্রহণ করেছেন।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান বলেন, “এখন অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। বিনিয়োগ তেমন হচ্ছে না। সবাই ভাবছে আগে নির্বাচন হোক, তারপর পরিবেশের ওপর নির্ভর করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে।”

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, “ব্যবসায়ীরা এখনো আস্থা ফিরে পাননি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। সরকারের উচিত দ্রুত একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে ব্যবসায়িক আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।”

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমদানির ধারাবাহিক পতন অর্থনীতির স্থবিরতার স্পষ্ট সংকেত। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, “জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আমদানির পরিমাণ প্রায় ২৬ শতাংশ কমার প্রক্ষেপণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মন্দা ভাবকে ইঙ্গিত করছে। আগামী প্রান্তিকে অর্থনীতির গতি আরও মন্থর হওয়ার ঝুঁকি প্রবল।”

তিনি বিনিয়োগ পুনরুজ্জীবিত করতে স্বল্পমেয়াদি কর-সুবিধা, সহজ ঋণ এবং কাঁচামাল ও শিল্প যন্ত্রাংশ আমদানিতে সহায়ক নীতি গ্রহণের পরামর্শ দেন। পাশাপাশি, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপরও জোর দেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, “অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর পরিবর্তে আরও বেশি নিচের দিকে নামার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন হয়ে গেলে পরিবেশ স্বাভাবিক হলে অর্থনীতিকে মেরামত করার জন্য যে পদক্ষেপগুলো দরকার, সেগুলো যেন দ্রুত গ্রহণ করা যায়, তার প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে।”