‘ইচ্ছেপূরণ প্রকল্প’ ফিরছে, সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে চট্টগ্রাম

বাংলাদেশ সরকার
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংসদ সদস্যদের নিজ এলাকায় উন্নয়নের জন্য নেওয়া ‘ইচ্ছেপূরণ প্রকল্প’ সরকার পতনের পর বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তা আবার ফিরছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এখন প্রকল্পটির ব্যয় ৩৯ শতাংশ এবং মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এই সংশোধিত প্রস্তাবে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম জেলার জন্য। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এলজিইডির ‘সর্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন-২’ শীর্ষক এই প্রকল্পটি ২০২২ সালের মার্চে এক হাজার ৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে অনুমোদন পেয়েছিল। এখন সেই ব্যয় ৪১৮ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন থেকে এক বছর বাড়িয়ে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত করার কথা বলা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, এলাকাভিত্তিক ব্যয় বিভাজন পর্যালোচনায় দেখা যায়, সংশোধিত নতুন প্রস্তাবে চট্টগ্রাম জেলা সর্বোচ্চ ৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে। এর বিপরীতে সর্বনিম্ন বরাদ্দ রাখা হয়েছে মেহেরপুর জেলার জন্য, ৫ কোটি টাকা।

প্রকল্পটি যখন হাতে নেওয়া হয়, তখন কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি, যদিও নিয়ম অনুযায়ী ৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের প্রকল্পে সম্ভাব্যতা যাচাই বাধ্যতামূলক। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক পর্যবেক্ষণেও একে প্রকল্পটির অন্যতম দুর্বল দিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল মূলত সংসদ সদস্যদের ইচ্ছে পূরণের জন্য। এর মাধ্যমে সংসদ সদস্যরা নিজেদের মতো করে মসজিদ, মন্দির এমনকি নেতাদের নিজস্ব কবরস্থানও উন্নয়ন করেছেন।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রকল্পটির যেসব কাজ শেষ হওয়ার পথে রয়েছে তা দ্রুত শেষ করতে হবে এবং যেসব কাজের টেন্ডার এখনো হয়নি, সেগুলো বাতিল করে দ্রুত প্রকল্প সমাপ্ত করতে হবে। কিন্তু এখন সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করে উল্টো ব্যয় ও সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলো।

এলজিইডি মাঝপথে এসে ব্যয় বাড়ানোর কারণ হিসেবে বলছে, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়ায় প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন বিশেষ সুবিধাভাতা ঘোষণা করায় নতুন ইকনোমিক সাবকোড অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিও সংশোধনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রকল্পটি নিয়ে আইএমইডির সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, কাজ শুরুর আগে ফিজিবিলিটি স্টাডি না হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে কিছু কাজের প্রাক্কলন সুনির্দিষ্ট করা সম্ভব হয়নি। সংস্থাটি প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব ও সামাজিক বিরোধকে ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ভবিষ্যতে সমজাতীয় প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ করে প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ ও পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে আইএমইডি।

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জনপ্রতিনিধিদের কাজ হলো জাতীয় সংসদে আইন, নীতি—এসব প্রণয়ন নিয়ে কথা বলা। কোন এলাকায় উন্নয়ন বরাদ্দ কেমন হবে, তা নিয়েও বলতে পারেন। কিন্তু তারা যখন বাস্তবায়নের কাজে নামেন, তখনই তা তাদের মৌলিক ভূমিকার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গবেষণায় দেখেছি, এই প্রকল্পের অর্থ খরচের নামে ব্যাপকভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। এতে জনগণের অর্থ লুণ্ঠিত হয়েছে।’