হজে সাড়া কম, ৪৩% কোটা খালি; খরচ বৃদ্ধি-অর্থ সংকটকে দুষছেন সংশ্লিষ্টরা


আগামী বছর হজে যেতে আগ্রহীদের নিবন্ধনে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি, কোটার প্রায় ৪৩ শতাংশই খালি থাকছে। অতিরিক্ত বিমান ভাড়া ও উচ্চ নিবন্ধন ফি-সহ সার্বিক অর্থনৈতিক সংকটকে এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন হজ এজেন্সি মালিক ও সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে সরকারি ব্যবস্থাপনার প্রতি হজযাত্রীদের অনীহা এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগও উঠেছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৬ অক্টোবর নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হয়েছে এবং তা আর বাড়ানো হবে না। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, আগামী বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৭৩ হাজার ৪১৬ জন, যা মোট কোটার প্রায় ৫৭ শতাংশ। ফলে ৫৩ হাজার ৭৮২ জনের কোটা খালি থাকছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার হজ নিবন্ধনে সাড়া সবচেয়ে কম। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, হজ প্যাকেজের মূল্য প্রত্যাশিতভাবে কমানো হয়নি, বিশেষ করে বিমান ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ধরা হয়েছে। এছাড়া, প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকাও আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেকে ব্যাংকে টাকা জমা রাখলেও তা তুলতে পারছেন না বলেও জানা গেছে।

আশ্চর্যজনকভাবে, সরকারি ব্যবস্থাপনার প্রতি হজযাত্রীদের আস্থা তলানিতে ঠেকেছে। মোট কোটার ১০ শতাংশেরও কম বরাদ্দ থাকলেও এবার সরকারিভাবে নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৪ হাজার ১০২ জন। অথচ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছেন ৬৯ হাজার ৩১৪ জন।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, “ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রতি ওমরাহ পালনের প্রবণতা বেড়েছে। অনেকের ধারণা, ওমরাহ করলে আর হজ করার প্রয়োজন নেই—এই ভুল ধারণার কারণেও সাড়া কম হতে পারে। একই সঙ্গে মানুষের অর্থ সংকট ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবও রয়েছে।”

আল-কুতুব হজ ট্রাভেলসের মালিক হাবিবুল্লাহ মুহাম্মাদ কুতুবুদ্দীন অভিযোগ করেন, “এবার প্রাক ও প্রাথমিক নিবন্ধনসহ প্রতি হজযাত্রীর জন্য ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত। হাব এবং এজেন্সি মালিকরা এই অর্থ কমানোর অনুরোধ করলেও মন্ত্রণালয় সাড়া দেয়নি। এছাড়া বিমান ভাড়াও অগ্রিম নেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, “হজ নিবন্ধনে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কিছু ফ্যাসিস্ট (সাবেক সরকার সমর্থক) কর্মকর্তা জড়িত, যাদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক মুসল্লি হজ নিবন্ধনের সুযোগ পাননি।”

এ বিষয়ে হজ অধিশাখার যুগ্ম সচিব ড. মো. মঞ্জুরুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন কেউ কেউ। ড. মঞ্জুরুল হক অবশ্য তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং জানিয়েছেন, হজের নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো হবে না।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ২৬ মে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।