শান্তি চুক্তি করানো আমার শখ: থাই-কম্বোডিয়া চুক্তির পর ট্রাম্প


মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যাকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে থাই কর্মকর্তারা ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে খণ্ডন করে বলেছেন, এটি কোনো শান্তি চুক্তি নয়, বরং একটি ‘যৌথ ঘোষণা’।

রোববার কুয়ালালামপুরে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে থাই প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম উপস্থিত ছিলেন।

চুক্তি স্বাক্ষর শেষে সাংবাদিকদের কাছে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “এটি লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারে। আমি শান্তি চুক্তি করাতে খুবই দক্ষ। এটি আমার কাছে প্রায় শখের বিষয় হয়ে গেছে।”

অন্যদিকে, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, আগামী বছরের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মনোনয়ন দিয়েছেন।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাইয়ে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প তখন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীকে সংঘাত বন্ধে বাধ্য করেছিলেন বলে জানা যায়। রোববার কুয়ালালামপুরেও তিনি বলেছেন, তাঁর প্রশাসন বাণিজ্য চুক্তিকে ব্যবহার করে অন্য দেশগুলোকে শান্তি স্থাপনের জন্য কূটনৈতিক চাপ দেবে।

এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই চুক্তির অংশ হিসেবে ১৮ জন কম্বোডিয়ান যুদ্ধবন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে।

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার চুক্তির সময় মঞ্চের ব্যানারে ‘শান্তির বার্তা: কম্বোডিয়া–থাইল্যান্ড শান্তি চুক্তি’ লেখা থাকলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে দ্বিধা তৈরি হয়।

অনুষ্ঠানস্থল থেকে বিবিসির সাংবাদিক থেসা অং জানান, আগের দিন (শনিবার) থাই কর্তৃপক্ষ এটিকে থাই-কম্বোডিয়ার বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কিত একটি ‘যৌথ ঘোষণা’ হিসেবে উল্লেখ করেছিল। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প এটিকে ‘কুয়ালালামপুর পিস অ্যাকর্ড’ বা ‘কুয়ালালামপুর শান্তি চুক্তি’ বলে ঘোষণা দেন।

চুক্তি স্বাক্ষর শেষে থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিহাসাক ফুয়াংকেত এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন। সাংবাদিকরা তাঁকে চুক্তিটির প্রকৃত নাম জিজ্ঞেস করলে ফুয়াংকেত জোর দিয়ে বলেন, থাইল্যান্ড শনিবার যেটিকে ‘যৌথ ঘোষণা’ বলেছিল, চুক্তিটি এখনও সেই নামেই বহাল আছে।

বিবিসির সাংবাদিক থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এটিকে শান্তি চুক্তি বলা যাবে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেন, “এটিকে আমি ‘শান্তির পথে একটি পদক্ষেপ’ বলব।” থাই কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে জোর দিয়েই বলেন, তারা যে নথিতে স্বাক্ষর করছেন সেটি হলো ‘থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার সম্পর্ক নিয়ে একটি যৌথ ঘোষণা’, তাই তারা এটিকে শান্তি চুক্তি বলতে নারাজ।

আশিয়ানের পক্ষ থেকে এই চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান বলেছেন, বিবাদমান সীমান্ত এলাকায় আঞ্চলিক পর্যবেক্ষক গঠনের লক্ষ্যে এই চুক্তি হয়েছে।

মোহাম্মদ হাসান বলেন, “গত ২৮ জুলাইয়ের পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও কিছু ছোটখাটো লঙ্ঘন ঘটে। আমরা চাই আর কোনো যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন না হোক। উভয় দেশকে সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে নিজেদের ভারী অস্ত্র সরিয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া, সীমান্তে পুঁতে রাখা মাইনগুলো উদ্ধার, অপসারণ ও ধ্বংসেও যৌথ পদক্ষেপ নিতে হবে।”