শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২

চকরিয়ায় আউশের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

‘ব্রি ধান ১০৬’ ও ‘৪৮’ জাতে সাফল্য
এম. জিয়াবুল হক | প্রকাশিতঃ ২৬ অক্টোবর ২০২৫ | ৯:৪০ অপরাহ্ন


চকরিয়ার বিলে বিলে এখন সোনালী ঢেউ। বাতাসে দুলছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। চলতি মৌসুমে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে আউশ ধানের শীষ বাতাসে হেলেদুলে পড়ছে। আশাজাগানিয়া এই বাম্পার ফলন দেখে স্থানীয় প্রান্তিক কৃষকদের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাঁসির ঝিলিক।

সরেজমিনে উপজেলার কৈয়ারবিল ও পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নে গিয়ে কৃষকদের এই অন্যরকম উচ্ছ্বাস ও অনুভূতি দেখা গেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন সোনালি আউশ ধান কর্তনে তুমুল ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ধানের ভারে নুয়ে পড়েছে প্রতিটি শীষ। ঘাম ঝরানো স্বপ্নের এই ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত প্রতিটি কৃষক পরিবার। বিলের পর বিলজুড়ে আউশ ধানের সোনালী রঙ যেন পুরো প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তুলেছে।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৬০০ হেক্টর (চার হাজার একর) জমিতে সোনালী ফসল আউশধান চাষ করা হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পার্টনার প্রকল্পের মাধ্যমে মোট ২৫টি প্রদর্শনীর আওতায় কৃষকেরা উচ্চ ফলনশীল ব্রি ধান ১০৬ ও ৪৮ হাইব্রিড জাতের আউশধান চাষ করেছেন।

এরই মধ্যে ফলন পর্যালোচনার কাজও শুরু হয়েছে। চলতি অক্টোবর মাসের শুরুতে উপজেলার পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নে পার্টনার প্রকল্পের আউশ প্রদর্শনীর ব্রি ধান ১০৬ জাতের নমুনা শস্য কর্তনের মাধ্যমে ফলন নির্ণয় করা হয়। চকরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইসরাত জাহান সুইটি এবং উপসহকারী কৃষি অফিসার জনি নন্দি ও মো. রায়হান উপস্থিত থেকে এই নমুনা শস্য কর্তন কার্যক্রম তদারকি করেন।

একইভাবে উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নে আউশ প্রদর্শনীর ব্রি ধান ৪৮ জাতের নমুনা শস্য কর্তন করা হয়। চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মোঃ মহিউদ্দিন এবং সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসাররা উপস্থিত থেকে নমুনা শস্য কর্তন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এ বছর চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকার মধ্যে পূর্ববড় ভেওলা, সাহারবিল, কৈয়ারবিল ও বিএমচর ইউনিয়নে আউশধানের আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়েছে। অন্যান্য ইউনিয়নেও অল্প বিস্তর জমিতে আবাদ হয়েছে।

সাহারবিল ইউনিয়নের কৃষক আহমদ হোসেন ও পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের কৃষক নুর মোহাম্মদ তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। আহমদ হোসেন ও নুর মোহাম্মদ উভয়েই জানান, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর আউশ ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। পাশাপাশি বাজারে ধানের দামও বেশ ভালো। এমন ভালো ফলন পেয়ে তারা খুবই খুশী।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মো. মহিউদ্দিন এই সাফল্যের পেছনের কারণ তুলে ধরেন। মো. মহিউদ্দিন বলেন, এ বছর হাইব্রিড জাতের আউশধান ব্রি ধান ১০৬ ও ৪৮ চাষ করে কৃষকেরা চমৎকার ফলন পেয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মোট ২৫ টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়। এই প্রদর্শনী প্লটের আওতায় চাষের শুরু থেকে ধান কর্তন পর্যন্ত কৃষকদেরকে মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত উপসহকারী কৃষি অফিসাররা নিবিড় পরামর্শ দিয়েছেন। ক্ষেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে ফসলের সুরক্ষায় নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। এসব কারণেই এবছর আউশধান চাষে বাম্পার ফলন এসেছে।

মাঠপর্যায়ে আউশধান কর্তন পর্যবেক্ষণ করে চকরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার ইশরাত জাহান সুইটি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ইশরাত জাহান সুইটি বলেন, অনুকূল আবহাওয়া, কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিবিড় তদারকির কারণে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শাহনাজ ফেরদৌসী পুরো বিষয়টির সমন্বয় করে বলেন, আউশধান চাষের আগে কৃষকদেরকে সরকারিভাবে কৃষি ভর্তুকি, বিনামূল্যে বীজ, সার ও প্রণোদনা দেওয়ায় বিগত বছরের তুলনায় এ বছর আউশের এমন বাম্পার ফলন সম্ভব হয়েছে। কৃষিবিদ শাহনাজ ফেরদৌসী আরও উল্লেখ করেন, আউশ চাষে সেচ, সার ও শ্রম তুলনামূলক কম খরচ হয়। বর্তমানে বাজারে ধানের দামও ভাল। এভাবে ধানের দাম থাকলে কৃষকেরা নিশ্চিতভাবে ভালো লাভবান হবেন।