টাইব্রেকারে হিরোর বীরত্ব, ফেনীকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে চট্টগ্রাম


স্নায়ুক্ষয়ী এক ফাইনাল দেখল নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম। জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ওয়াসিম অঞ্চলের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে নির্ধারিত ৯০ মিনিট, এরপর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটও শেষ হলো ১-১ গোলের সমতায়। অগত্যা ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে। আর সেখানেই গোলরক্ষক হিরোর নৈপুণ্যে ফেনী জেলাকে ৪-১ গোলে হারিয়ে উল্লাসে মাতল চট্টগ্রাম। এই জয়ে ওয়াসিম অঞ্চলের সেরা হয়ে টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্ব অর্থাৎ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল চট্টগ্রাম জেলা। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ঢাকায় আট অঞ্চলের সেরা আট দলকে নিয়ে শুরু হবে চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত আসর।

সোমবারের (২৭ অক্টোবর) এই ফাইনালে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে অসমতল মাঠেও খেলার শুরু থেকে চট্টগ্রামকে চেপে ধরার চেষ্টা করে ফেনী। প্রথমদিকে বেশ কয়েকটি নিশ্চিত সুযোগও তৈরি করে তারা। ৫ মিনিটেই ফেনীর কালামের শট জালে ঢোকার ঠিক আগে চট্টগ্রামের স্টপার আক্তার ঠেকিয়ে দিয়ে দলকে সে যাত্রায় রক্ষা করেন। ১৩ মিনিটে সেই কালাম আবারও সহজ সুযোগ হাতছাড়া করলে গোলবঞ্চিত হয় ফেনী। তবে গোলের জন্য তাদের খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। ২০ মিনিটেই এগিয়ে যায় ফেনী, যদিও গোলটি আসে দুর্ভাগ্যজনকভাবে। এ সময় ফেনীর লেফট উইঙ্গার রাব্বীর ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালেই বল ঢুকিয়ে দেন চট্টগ্রামের ডিফেন্ডার ও অধিনায়ক আলাউদ্দিন (১-০)।

আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ার পর যেন হুঁশ ফেরে চট্টগ্রামের। খেলায় সমতা ফেরাতে মরিয়া হয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে মুহুর্মুহু আক্রমণ শানাতে থাকে তারা। তবে স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতায় প্রথমার্ধে আর গোল শোধ করা সম্ভব হয়নি।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দুটি পরিবর্তন আনেন চট্টগ্রামের কোচ নাজু। পরিবর্তিত খেলোয়াড় হিসেবে দীপু ও শাহীন মাঠে নামলে খেলার চিত্রই পাল্টে যায়। চট্টগ্রাম নব উদ্যমে খেলা শুরু করে। দ্বিতীয়ার্ধের ১২ মিনিটে ডানপ্রান্তে সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে বদলি নামা দীপু ফাঁকা বল পেয়েও বাইরে মেরে সুযোগ নষ্ট করেন। এর দুই মিনিট পর ফেনীর রাব্বির হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। অবশেষে দ্বিতীয়ার্ধের ১৮ মিনিটে কাঙ্ক্ষিত সমতাসূচক গোলের দেখা পায় চট্টগ্রাম। ডানপ্রান্তের কর্নার থেকে উড়ে আসা বল ফেনীর বক্সে জটলার সৃষ্টি করে, সেই সুযোগে সুমন ডানপায়ের জোরালো শটে বল জালে জড়ান (১-১)।

খেলায় সমতা ফেরার পর উজ্জীবিত চট্টগ্রাম আরও কয়েকটি সুযোগ পেলেও ব্যবধান বাড়াতে পারেনি। অন্যদিকে, দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে ফেনীর নুরুদ্দিন কিপারের হাতে বল মেরে সহজ সুযোগ নষ্ট করলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে দুই দলই গোল করার চেয়ে রক্ষণ সামলাতে বেশি ব্যস্ত ছিল। এর মাঝেও অতিরিক্ত সময়ের ৭ মিনিটে ফেনীর গোলরক্ষকের ভুলে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি চট্টগ্রামের আসিফ। ১১ মিনিটে চট্টগ্রামের শাহীনও কিপারের হাতে বল মেরে সুযোগ হাতছাড়া করেন। দ্বিতীয়ার্ধের ১১ মিনিটে কর্নার থেকে ফেনীর নুরুদ্দিনের নিখুঁত হেড চট্টগ্রামের গোলরক্ষক হিরোর হাতে জমা পড়লে ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ায়।

পেনাল্টি শুটআউটে চট্টগ্রামের নায়ক বনে যান গোলরক্ষক হিরো। চট্টগ্রাম দলের বাবু, ফাহিম, জাহেদ ও দীপু একে একে চারটি শট নিয়ে চারটিই জালে জড়ান। অন্যদিকে, ফেনীর হয়ে রাব্বী প্রথম শটে গোল করলেও দ্বিতীয় শটে নুরুদ্দিনের কিক সাইডবারে লেগে ফিরে আসে। এরপর রাকিবুলের নেওয়া তৃতীয় শটটি হিরো দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দিলেই চট্টগ্রামের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। ৪-১ গোলের জয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে চট্টগ্রাম শিবির, আর মাঠের সেরা খেলোয়াড় হন গোলরক্ষক হিরো।

ম্যাচে এই গুরুত্বপূর্ণ জয়ের পর চট্টগ্রাম জেলা দলের ম্যানেজার মো. সরওয়ার আলম চৌধুরী মনি ও কোচ নাজু মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে শোকরিয়া আদায় করেন। একই সঙ্গে তারা দলের খেলোয়াড় এবং চট্টগ্রাম থেকে দলকে সমর্থন দিতে মাঠে ছুটে আসা কর্মকর্তা, ক্রীড়া সংগঠক, ক্রীড়া সাংবাদিক, সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এ সময় মাঠে উপস্থিত থেকে দলকে উৎসাহ জোগান চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের (সিডিএফএ) সভাপতি এস এম শহীদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আ ন ম ওয়াহিদ দুলাল, কোষাধ্যক্ষ দিদারুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক সালাউদ্দিন জাহেদ, নির্বাহী সদস্য মাহাবুবুল আলম, হারুনুর রশীদ, আবু সৈয়দ, মাহামুদুর রহমান মাহাবুব, জসিম আহামেদ, সাইফুল আলম খান, কাজী জসিম উদ্দীন, সিজেকেএস কাউন্সিলর রায়হান উদ্দীন রুবেল, সিডিএফএ কাউন্সিলর আবু বক্কর সিদ্দিকী, নজরুল কবির দীপুসহ বিপুল সংখ্যক ক্রীড়া সংগঠক এবং সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়েরা।