‘সিঙ্গাপুরী’ এস আলমের ‘বিনিয়োগ সুরক্ষা’ মামলা, গভর্নরের অভিযোগ পাচারের


দেশের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী এস আলম ও তার পরিবার বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশি ব্যবস্থায় গেছে। তাদের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকার অবৈধভাবে পাচারের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে তাদের সম্পদ জব্দ, বাজেয়াপ্ত ও ধ্বংস করছে, এতে তাদের কোটি কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছে।

লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ও তার পরিবারের আইনজীবীরা গত সোমবার বিশ্বব্যাংকের ওয়াশিংটনে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটসে (ইকসিড) এই আবেদন জমা দেন।

আজ বুধবার সকালে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, এস আলম পরিবারের অভিযোগ, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এই পরিবারকে লক্ষ্য করে অযৌক্তিকভাবে সম্পদ জব্দ ও বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে ‘ভিত্তিহীন’ তদন্ত এবং ‘প্ররোচনামূলক মিডিয়া অভিযান’ চালাচ্ছে। আইনজীবীরা শত কোটি ডলার ক্ষতির দাবি করলেও ক্ষতিপূরণের সঠিক হিসাব দেননি।

এই মামলা ইউনূস সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে, কারণ এই সরকার শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দেশ থেকে পাচার হওয়া শত শত কোটি ডলার ফেরত আনার চেষ্টা করছে। সরকারের শ্বেতপত্র কমিটি এক প্রতিবেদনে জানায়, ওই শাসনামলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।

পাচার হওয়া টাকা উদ্ধার প্রচেষ্টার নেতৃত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর অভিযোগ করেছেন, এস আলম পরিবার বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “এই অর্থ কোথায় গেল?” এস আলম গ্রুপ বরাবরই এসব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে অস্বীকার করে আসছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে এস আলম পরিবারের আইনজীবীরা ইউনূস সরকারকে জানিয়েছিলেন, ছয় মাসের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা না হলে সালিশি মামলা করা হবে।

বিশ্বব্যাংকে করা এই সালিশি মামলাটি ২০০৪ সালের বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির আওতায় করা হয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের হাতে আসা নথি অনুযায়ী, এস আলম পরিবার বর্তমানে সিঙ্গাপুরে বসবাস করছে। তারা ২০২০ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করার পর ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে। এস আলম পরিবার আগে বলেছে, সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে এবং বাংলাদেশে ১৯৮০ সালের বিদেশি ব্যক্তিগত বিনিয়োগ আইন অনুযায়ী তাদের সুরক্ষা পাওয়া উচিত।

এই সালিশি মামলার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, “যখনই আবেদন আমাদের হাতে আসবে, তখনই আমরা যথাযথভাবে উত্তর দেব।” তবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এ বিষয়ে মন্তব্যের আবেদনে সাড়া দেয়নি।

সাবেক আইএমএফ কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুর আরও অভিযোগ করেন, এস আলম, তার পরিবার ও সহযোগীরা বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় জোরপূর্বক ছয়টি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে ঋণ ও আমদানি জালিয়াতি করে বিদেশে অর্থ পাচার করেছে। তিনি বলেন, “আমাদের হাতে প্রচুর প্রমাণ আছে। …এখন আমরা তাদের ব্যাংকগুলো নিয়ে কাজ করছি। এগুলোর অবস্থা তথৈবচ। এসব ব্যাংক বাঁচাতে বেইল আউট করা হয়েছে।”

এদিকে, সালিশি মামলায় এস আলম পরিবার দাবি করেছে, সরকার তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, যেসব ধনী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে, তাদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতা করা হতে পারে।